লাঠি হাতে সমাবেশস্থলে মহড়া দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা
লাঠি হাতে সমাবেশস্থলে মহড়া দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

মিরপুরে আ.লীগের বাধায় সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি

দুই দফায় সমাবেশের স্থান পরিবর্তন হলেও সমাবেশ করতে পারেনি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। প্রতিটি স্থানেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মসূচি নিয়ে হাজির হওয়ায় বিএনপিকে স্থান পরিবর্তন করে দেয় পুলিশ। শেষে অনুমতি পাওয়া পল্লবী থানাধীন মুকুল ফৌজ মাঠে বিএনপি মঞ্চ তৈরি করতে গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় দফায় দফায় দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে সমাবেশস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি।

জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নেতা–কর্মীদের হত্যা করার প্রতিবাদে ঢাকার ১৬টি জায়গায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার পল্লবী জোনে সমাবেশ করার কথা ছিল। এ জন্য তারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতিও নিয়েছিল।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ওই স্থানে প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর স্মরণসভা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্মরণসভা করার মতো পরিস্থিতি না থাকায় ওই স্থান থেকে চলে যাওয়ার আগে তাঁরা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর জন্য দোয়া করেছেন। উল্লেখ্য, বিএনপির জন্য নির্ধারিত ওই স্থানটি আওয়ামী লীগ প্রায় দুই ঘণ্টা দখলে রাখে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের হটিয়ে সমাবেশস্থল দখলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক। আজ সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা ১টার দিকে পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সে জন্য পল্লবী থানাধীন মুকুল ফৌজি মাঠে মঞ্চ তৈরি করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। পরে তাদের ধাওয়া দিলে পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এলাকা ছাড়া করে। পুলিশের হামলার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে বিএনপির কয়েকজন পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার জসিমউদ্দিন মোল্লার সঙ্গে কথা বলতে যান। এ সময় পুলিশ নিশ্চুপ ছিল। কোনো জবাব দেয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মুকুল ফৌজ মাঠে বেলা সোয়া দুইটার দিকে মঞ্চ তৈরি করতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপিকে বাধা দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই এলাকা ছেড়ে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকায় মহড়া দিতে থাকেন। বেলা তিনটার দিকে বিএনপির সমাবেশস্থলের জায়গা দখলে নেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থানের পর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। যাওয়ার আগে তাঁরা দোয়া করেন।

সমাবেশস্থল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দেওয়ার পর বিএনপির প্ল্যাকার্ডে আগুন ধরিয়ে দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সালাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত সাজেদা চৌধুরীর স্মরণে ওই জায়গায় তাঁদের স্মরণসভা করার কথা ছিল। বিএনপিও একই স্থানে কর্মসূচি ডাকায় তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তারা প্রথমে হামলা চালান। পরে সেখানে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।

অবশ্য ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, শাহ আলী, রূপনগর, পল্লবী ও মিরপুর থানার আওয়ামী নেতা-কর্মীদের মিছিল নিয়ে বের হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া ছিল।  বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মিরপুর অরজিনাল ১০ নম্বরে এসে পৌঁছান, তখন সমাবেশ প্রতিহত করতে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।