ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমানকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে এবং তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও এক প্রার্থীর করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ শুনানির সময় বলেন, প্রথম রিটটি সরাসরি খারিজ হয়েছে, আদালতের এমন আদেশের তথ্য গোপন করে আরেকটি রিট করে প্রার্থিতা নেওয়া আদালতের সঙ্গে ‘প্রতারণা’। আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এত চতুরতার কৌশল নিলে হবে না। হাইকোর্টের সঙ্গে ফ্রড (প্রতারণা) করেছেন। এ ধরনের ফ্রড (প্রতারণা) করতে দেওয়া হবে না।’ একপর্যায়ে হাসিবুরের আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টে ভিন্ন আইনজীবী ছিলেন।
হাসিবুর রহমান সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে তাঁর মনোনয়নপত্র গত ৪ ডিসেম্বর বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঋণখেলাপির কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি ইসিতে আপিল করেন, যা ১৪ ডিসেম্বর নামঞ্জুর হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। ১৮ ডিসেম্বর রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।
পরে প্রার্থিতা পেতে আরেকটি রিট করেন হাসিবুর। শুনানি নিয়ে ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী মো. ইদ্রিস ব্যাপারী ও নির্বাচন কমিশন পৃথক আবেদন করে। এমনকি প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাসিবুরের করা রিট সরাসরি খারিজ করে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে তিনি নিজেও একটি আবেদন করেন। পৃথক আবেদন ২৬ ডিসেম্বর চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত পৃথক আবেদনগুলো আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।
আদালতে মো. ইদ্রিস ব্যাপারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। হাসিবুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও শাহ মঞ্জুরুল হক।
ইদ্রিস ব্যাপারীর আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রথম হাসিবুর একটি রিট করেন, যা ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরাসরি খারিজ করে দেন। এ তথ্য গোপন করে আরেকটি রিট করে অপর একটি বেঞ্চ থেকে ২০ ডিসেম্বর প্রার্থিতা ফিরে পান। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর তিনি প্রতীক বরাদ্দ পান, যদিও তাতে ২০ ডিসেম্বরের সই দেখা যায়। অথচ ১৮ ডিসেম্বর তাঁর প্রার্থিতা বিষয়ে কোনো আদেশই ছিল না। তথ্য গোপন করে রিট করে তাঁর প্রার্থিতা নেওয়া আদালতের সঙ্গে প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়ায় হাসিবুর নির্বাচন করতে পারবেন না।