বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন। গাজীপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন। গাজীপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর

শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা শিল্প এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তাঁর প্রেতাত্মারা শিল্প এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, কিন্তু তাঁর প্রেতাত্মা বা ভূত কিন্তু এই দেশের মধ্যে এখনো আছে। তারা ভাবে, ‘শেখ হাসিনাকে যদি আবার দেশে ফিরিয়ে আনতে পারতাম। তাহলে তারা দেশের টাকাপয়সা আবার লুট করতে পারতাম।’ এই জন্য তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র করছে। তারা চক্রান্ত করছে শিল্প এলাকায়।

গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রামের পর এই দুঃশাসন ও প্রহসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। হাসিনা শুধু চলে যাননি, তিনি পালিয়ে গেছেন। এই শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর নির্যাতন করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। শ্রমিককে হত্যা করেছেন। ছাত্র হত্যা করেছেন—এমনকি নারীদের হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করেননি।’

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে জেলে নিয়ে গিয়ে মানুষকে নির্যাতন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে একটা ভীতির রাজত্বে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি যখন ছাত্র, শ্রমিক, জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পালিয়ে গেছেন, তখন এ দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে এলাকাগুলোতে পোশাকশিল্প রয়েছে। যেখানে আমাদের মা–বোনেরা ও ছেলেরা কাজ করে। ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি আয়ে হয়েছে পোশাক খাত থেকে। আমাদের ৫০ লাখ ১৭ হাজার শ্রমিক কারখানায় কাজ করে। তাই তারা এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। এর মধ্যে আমাদের পাশের দেশ তো এই শিল্পকে ধ্বংস করতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাসিনা ওই ভারতেই গিয়ে বসবাস করছেন।’

ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা ভারতকে বারবার বলেছি, অনুরোধ করেছি, এমন একজন খুনি, যিনি গণহত্যা করেছেন। তাঁকে জায়গা দেবেন না। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন এবং অনেক গণহত্যার আসামি হয়েছেন। তারা (ভারত) এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বর্তমান সরকারকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আহ্বান জানাব, অবিলম্বে গণহত্যাকারী, দেশ ধ্বংসকারী, রাষ্ট্রবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।’

নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে গত ১৪-১৫ বছরে, সেই জঞ্জালগুলো দূর করে একটি পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে সব রাজনৈতিক দল একটি নির্বাচন করতে পারে। যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই দায়িত্ব আমরা তাকে দিয়েছি। সেটা নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছেন। তাকে আমরা সহযোগিতা করছি।’ বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানও একই কথা বলেছেন। আমরা আশা করি, এই সরকার সুন্দর একটি পরিবেশ করতে পারবে, আমরা ভোট দিতে চাই, আমরা ভোট দিয়ে আমাদের সংসদ নির্বাচন করতে চাই।’

বাংলাদেশ শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হুমায়ুন কবীর খান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী সামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান ও হাসান উদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ।