নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে যাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ঠিকানা—৮২ শাহ আলীবাগ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬। শাহ আলীবাগ এলাকায় গিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলেও কেউ চিনতে পারলেন না। একপর্যায়ে এক দোকানি বললেন, ‘খানকা শরিফ গিয়ে দেখেন, ওইটা হতে পারে।’ গিয়ে দেখা যায়, খানকা শরিফ নামে পরিচিত পাঁচতলা ভবনটির চতুর্থ তলায় বিএসপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। পরে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিএসপি হিসেবে নয়, খানকা শরিফ হিসেবেই এটি পরিচিত।
খানকা শরিফ নামে পরিচিত পাঁচতলা ভবনের মূল ফটকের সামনে ছোট–বড় তিনটি সাইনবোর্ড। সবচেয়ে বড় সাইনবোর্ডটি বিএসপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের। তারচেয়ে ছোট সাইনবোর্ডটি বিএসপির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের। সবচেয়ে ছোট সাইনবোর্ডটি মিরপুর মেট্রো মডেল থানা কার্যালয়ের। সব কটিই নতুন বা অল্প সময় আগে লাগানো।
ভবনটির প্রধান ফটকে কড়া নাড়তে একজন নিরাপত্তারক্ষী দরজা খুলে দিলেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিলে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। ভবনটির নিচতলায় গ্যারেজ, যেখানে কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা। সেখানে বিএসপির চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর ছবিসংবলিত আরবিতে লেখা নতুন একটি ব্যানারও পাওয়া গেল। ব্যানারের ওপর ডান পাশে পুরোনো কালো একটি নোটিশ বোর্ডে লেখা, ‘খানকা শরিফে রাজনৈতিক বা দুনিয়াদারির কথাবার্তা বলা নিষেধ। নির্ধারিত মাহফিলের তারিখ ব্যতীত রাত্র ৯টার পর খাদেম ব্যতীত অন্য কাহারো অবস্থান নিষেধ।’
ভেতরে প্রবেশের পর সেই নিরাপত্তারক্ষী আরেকজন ব্যক্তিকে ডাক দেন। তিনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিএসপির কার্যালয়ে যেতে বলেন। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা যায়, ভবনটির চারতলায় বিএসপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় বা প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয়ে তিনটি কক্ষ, সব কটিই আকারে ছোট।
কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই প্রথম যে কক্ষ, তাতে সাঁটানো আরও একটি নতুন ব্যানার। তাতে বিএসপির চেয়ারম্যানের ছবি, দলটির পাঁচটি আদর্শ, দলটির বাংলা ও ইংরেজি নাম, পতাকা, স্লোগান ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা রয়েছে। এই কক্ষে চারটি কম্পিউটার, একটি টেবিল, ১২টি চেয়ার, একটি প্রিন্টার, একটি নতুন ফটোকপি মেশিন রয়েছে। কিছু বইও আছে।
দ্বিতীয় কক্ষে দুটি টেবিল, কয়েকটি চেয়ার আছে। আর তৃতীয় কক্ষে একটি চৌকি বসানো, যেখানে দূরদূরান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা এলে তাঁরা থাকেন।
বিএসপির নেতারা জানান, পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় দলটির চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর কার্যালয়। বিএসপির চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠিত কিছু অরাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় ভবনের পঞ্চম ও তৃতীয় তলায়। আর নিচতলা ব্যবহার হয় গ্যারেজ হিসেবে। একই বাউন্ডারির ভেতর দলীয় কার্যালয়ের এই পাঁচতলা ভবন লাগোয়া আরেকটি চারতলা ভবন বিএসপির চেয়ারম্যানের বাসা। পাঁচতলা ভবনটির আরেক পাশে মসজিদ-এ গাউছুল আজম নামের একটি মসজিদ, যা বিএসপির চেয়ারম্যানের পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছে। আর চারতলায় বিএসপির কার্যালয়ের পাশেই আরেকটি কক্ষে দলটির ঢাকা জেলা কার্যালয়।
বিএসপির প্রধান কার্যালয়ে রোববার বিকেল চারটার দিকে প্রবেশ করলে সেখানে তিনজন নেতা-কর্মীর উপস্থিতি পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর দোতলায় বিএসপির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিয়ে যান নেতা-কর্মীরা।
দলটির চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধন না থাকায় কেউ রাজনৈতিক কার্যালয়ের জন্য ভবন ভাড়া দিতে চান না। তাই এখানেই অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
চূড়ান্ত নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজধানীর পল্টনের দিকে স্থায়ী প্রধান কার্যালয় করা হবে।
জানা যায়, বিএসপির প্রধান কার্যালয় শুরুতে ছিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ২০২১ সালের শুরুর দিকে তা মিরপুরের শাহ আলীবাগে আনা হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামের দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার এই দুই দলের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
বিএসপির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডারী গ্রামে শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর জন্ম। তাঁর পুরো নাম শাহ্জাদায়ে গাউছুল আ’যম আলহাজ সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্-মাইজভান্ডারী। তাঁর বাবার নাম শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল সোসাইনী আল্-মাইজভান্ডারী, তিনি পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৮৮ সাল থেকে মিরপুরের শাহ আলীবাগ এলাকায় থাকছে শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ও তাঁর পরিবার। শাহ আলীবাগ এলাকার এসব সম্পত্তি পৈতৃক। বিএসপির চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ও তাঁর পরিবার বিভিন্ন সংগঠনের আওতায় অরাজনৈতিকভাবে ১৯৮১ সাল থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের অরাজনৈতিক সংগঠন মইনীয়া যুব ফোরাম ১০ লাখ গাছ লাগানোয় ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ লাভ করে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা বিএসপির যাত্রা শুরু হয়।
শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী জানান, বিএসপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদে ৭১টি পদে ১২১ জন সদস্য রয়েছেন। বর্তমানে তাঁদের ৪০টি জেলায়, ২৫০টি উপজেলায়, ১ হাজার ইউনিয়নে কমিটি রয়েছে। আরও কমিটি দেওয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। দেশে তাঁদের প্রায় ২ হাজার নেতা, ৪০ হাজারের মতো কর্মী আছেন। নেতা–কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থেই তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে।
দলটির গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, বিএসপির পতাকা সাদা ও সবুজ কাপড়ের মধ্যে লাল বৃত্তের ওপর ইগল পাখির ছবি খচিত। দলটির প্রতীক আপেল। তাদের আদর্শ মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয় ঐক্য এবং প্রগতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি। দলটির মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল আজিজ সরকার।
বিএসপির চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো ইসলামিক দল নই। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে একটি জোট গঠন করছি। আমাদের লক্ষ্য বর্তমান সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা।’
যাদের সঙ্গে মতের মিল হবে, তাদের সঙ্গে কাজ করবেন জানিয়ে শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’