মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের আগে অনেক দল ও ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সামনের কয়েকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে...হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।’
আওয়ামী লীগ কি দলগত নাকি জোটগত নির্বাচন করবে এবং জাতীয় পার্টি থাকবে কি না—প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো জানতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বুধবার রাতে তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
বিএনপি নির্বাচন হতে দেবে না বলে জানিয়েছে। এতে শঙ্কা দেখছেন কি না, জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শঙ্কার এত পাহাড়, এত খরস্রোতা নদী পার হয়ে এলাম। এখন আবার কাকে ভয় পাব? এত বিপৎসংকুল দরিয়া পার হলাম, তারপর আবার ভয় কিসের? কোনো ভয় করি না। প্রতিহত করতে আমাদের লাগবে না, বাংলাদেশের জনগণ ও ভোটাররা তাদের প্রতিহত করবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি দিয়েছেন সেটা এবং সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছেন, সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপের সময় এখন আর অবশিষ্ট নেই। গতকাল (বুধবার) এটা আমি বলেছি। মিস্টার লুর চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। সেই চিঠির জবাব দু–এক দিনের মধ্যে দেব। এটা একটা সৌজন্য বোধ, শিষ্টাচারের বিষয়। তিনি একটা চিঠি দিয়েছেন, সেটার জবাব আমরা অবশ্যই দেব। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে। চিঠি প্রসঙ্গে আমাদের কথা এটাই।’
সিইসির সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি যে জায়গায় বসে আছেন, তাঁর বক্তব্যে এ ধরনের আহ্বান থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তিনি স্পেস রাখবেন কেন? স্পেস থাকলে সেখানে তাঁকে বলতে হবে। এমন কথা ওই পদে থাকলে আপনিও বলতেন। সেটার জন্য তো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা স্থগিত থাকে না। সেটা হয়ে গেছে। এখন দলগুলো নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করবে কি করবে না, এটা তাদের ব্যাপার। উনি সিইসি হিসেবে একটা আহ্বান করার দরকার, সেটা করেছেন।’
নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইউরোপ–আমেরিকা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। কখনো ভগবান আসে, কখনো অবতার আসে, এসব অনেক শুনেছি।’
পশ্চিমাদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। আজকে বিশ্ব কোথায়? কী হচ্ছে ফিলিস্তিনে? কী করতে পারল জাতিসংঘ? কী করতে পারল আমেরিকা? কী করতে পারল ইউরোপ? ইউক্রেন জ্বলছে, কী করল ইউরোপ? আর বাংলাদেশের একটা নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? আমি এসবের উত্তর দিতে রাজি না।’
বিএনপিবিহীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না আর গ্রহণযোগ্য না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনো বলছেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, আজ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেননি তিনি। কাজেই এসব প্রশ্ন করে লাভ নেই। ওদের বেলায় ঠিক আছে, আমাদের বেলায় সমস্যা। আজও কি বলেছেন ট্রাম্প যে তিনি বাইডেনকে মানেন? আরেকটা নির্বাচন সামনে। গণতন্ত্রের ভেতরে দোষত্রুটি সব জায়গায় আছে। পারফেক্ট কেউ না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান এফ রহমান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, শাম্মী আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ, সায়েম খান প্রমুখ।