পাঁচ সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিকদের আগ্রহ কম

১৪–দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আওয়ামী লীগ এককভাবে এই নির্বাচন করছে।

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটে এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। জোটের বাইরে আওয়ামী লীগ এককভাবেই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জোটের অন্য শরিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে খুব একটা তৎপরতাও নেই।

আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের অনেকে বলেছেন, পাঁচ সিটির কোনো একটি সিটিতেও আওয়ামী লীগের শরিক বেশির ভাগ দলেরই মেয়র পদে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি নেই।

একদিকে এমন বাস্তবতা, অন্যদিকে সিটি নির্বাচন বা স্থানীয় সরকারব্যবস্থার কোনো নির্বাচন আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে করে না। এমন পটভূমিতে ১৪–দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর এই সিটি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম।

সিটি নির্বাচন নিয়ে জোটগত কোনো আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি দলীয় প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
রাশেদ খান মেনন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি

১৪ দলের সূত্র জানায়, এই জোটে আওয়ামী লীগের শরিকদের মাত্র একটি দল তরীকত ফেডারেশন গাজীপুরে মেয়র পদে আলাদাভাবে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে। এর বাইরে অন্য কোথাও ১৪–দলীয় জোটের শরিকদের মেয়র পদে কোনো প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ কয়েকটি সিটিতে কয়েকজন করে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেবে। সেখানেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয় নির্দলীয়। তবে দলগুলোর সমর্থিত প্রার্থী থাকে কাউন্সিলর পদে।

পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। খুলনা ও বরিশালে ভোট হবে আগামী ১২ জুন। আর রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২১ জুন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ নজর রয়েছে। তবে এবার ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দলগতভাবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাই এখন পর্যন্ত এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এখন মাঠে আছে মূলত আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের বাইরে ধর্মভিত্তিক একটি দল বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচন নিয়ে কিছুটা তৎপর হয়েছে।

গাজীপুরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে তাঁর পক্ষ থেকেই আভাস দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুর, খুলনা ও সিলেটে বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আওয়ামী রীগের বাইরে এ ধরনের প্রার্থী হলে নির্বাচনী আমেজ জমে উঠতে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয় ২০০৪ সালে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবে করেছিল আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নেবে, এমন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে। তবে তা নির্ভর করবে বিএনপি বা অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কি না, তার ওপর।

তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সাধারণত আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে করে না। তাদের জোটের শরিক দলগুলোও সেভাবে কখনো মেয়র পদে প্রার্থী দেয় না। তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থনও খুব বেশি নয়। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে জাতীয় নির্বাচনের কিছু আসন ঘিরে। অন্য ক্ষেত্রে নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়।

জোটভুক্ত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জোটে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জোটের শরিকেরা আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন ঘোষণা করবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদ। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আর জাসদ প্রার্থী শফিয়ার রহমান মশাল প্রতীকে পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার ১৫৬ ভোট।

এবার এখন পর্যন্ত কোনো সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জাসদে আলোচনা নেই। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। জোটের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে কোথাও প্রার্থী দেবে না। তবে স্থানীয়ভাবে দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হলে তাতে ‘না’ করবে না তারা। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতবার একটি ওয়ার্ডে ওয়ার্কার্স পার্টির সমর্থিত প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। এবারও রাজশাহীতে দলটি থেকে একাধিক জায়গায় কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে জোটগত কোনো আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি দলীয় প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির ওপর ছেড়ে দিয়েছে।

জোটের আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশন অবশ্য এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। এই দলের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সাধারণত জোটগতভাবে হয় না। এবার সম্ভবত গাজীপুরে মেয়র পদে তাদের প্রার্থী থাকবে।

জোটের অন্য শরিকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা নেই বলে জানা গেছে।