সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ‘এক দফা’ দাবিতে দুই দিনের পদযাত্রা শেষ করল বিএনপি। দুই দিনে দলটির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তায় পদযাত্রা করেছেন। কর্মসূচিতে নেতারা বলেছেন, এই সরকার ও তাদের তৈরি করা সংবিধানের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। যারা নির্বাচনে যাবে, তাদের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।
দুই দিনের পদযাত্রায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, গুলি ও কৃষক দলের কর্মী সজীব বাদল হত্যার প্রতিবাদে শোক কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে শোকমিছিল বের হবে। গতকাল বুধবার ঢাকার পদযাত্রা শেষে যাত্রাবাড়ীতে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এই শোক কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
ঢাকার বাইরে গতকাল চট্টগ্রাম, খুলনা ও দিনাজপুরেও পদযাত্রা ছিল। দিনাজপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পদযাত্রায় অংশ নেন। দিনাজপুরে কৃষক দল ও শ্রমিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁরা একটা পরিবর্তন চান দেশের মাটির জন্য, সর্বোপরি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। তিনি এই সরকারের অধীন গত সোমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনেরও সমালোচনা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটা দল, যারা অন্যদের সহ্য করতে পারে না। সহ্য করতে না পেরে ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করেছিল। আজকে নতুন কায়দায় বাকশাল কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু নির্বাচন করতে চায় বাকশালি কায়দায়। যে কারণে শুধু বিএনপি নয়, হিরো আলমকেও ভয় তারা পায়।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে এক সমাবেশে দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছয়টি জায়গায় হামলার অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘এই গুলির হিসাব দিতে হবে। কার সন্তানকে মেরেছেন, এই জবাবটা দিতে হবে। প্রত্যেকটা গুম-খুনের বিচার আমরা পাই পাই করব। আর যাঁরা গুলি করছেন, তাঁদের বলব, সাবধান হয়ে যান। অন্যথায় জনগণের রোষানল থেকে রেহাই পাবেন না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। গতকাল লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন। আমাদের মিটিংয়ে আমাদের মিছিলে কোনোরকম গোলযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান কেন?’ তিনি বলেন, ‘শেষ কথা হলো এই—এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। যারা নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করবে, চেষ্টা করবে, তাদের সরকারের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে এ দেশের মাটিতে তাদের বিচার করা হবে।’
এর আগে সকালে আবদুল্লাহপুরে পদযাত্রার উদ্বোধন করে মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম, কাদের সাহেব (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, সংবিধানের বাইরে একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা, আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা-ও যাব না।’
আব্বাস বলেন, ‘কথা হচ্ছে খায়রুল হকের (এ বি এম খায়রুল হক) সংবিধান না, বাংলাদেশের সংবিধান। যে সংবিধান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে, ওই সংবিধান আমরা চাই না। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) তৈরি, খায়রুল হকের তৈরি করা ওই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।’
সকালে আবদুল্লাহপুরে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক বক্তব্য দেন। বিকেলে যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ, মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ।
গতকালের কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল ১০টা থেকেই নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল মার্কেটের পাশে জড়ো হন। তাঁদের হাতে ছিল বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ‘সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির’ নানা প্ল্যাকার্ড। সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার পর আবদুল্লাহপুর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। সেটি বিমানবন্দর, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মুগদা, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে গিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শেষ হয়। প্রায় ৩২ কিলোমিটার এই পদযাত্রায় সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা।