বিভাগীয় পর্যায়ের এই কর্মসূচি ঢাকায় হবে নয়াপল্টনে। তবে গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় পুলিশের অনুমতি পায়নি বিএনপি।
গণমিছিলের মতো যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি গণ–অবস্থানও জোরালোভাবে করতে চায় বিএনপি। আগামীকাল বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সব বিভাগে এই গণ–অবস্থান হবে। এতে বড় জমায়েত নিশ্চিত করতে সাংগঠনিক নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকায় এই গণ-অবস্থান কর্মসূচি হবে নয়াপল্টনে, বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। তবে গতকাল পর্যন্ত নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতি পায়নি বিএনপি।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। গণমিছিলের পর দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামীকাল ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগসহ) সদরে এই গণ–অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সাত–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও আলাদাভাবে এই কর্মসূচি একযোগে পালন করবে বলে জানিয়েছে।
‘আমরা চলমান আন্দোলনকে ধাপে ধাপে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিতে চাই। এ পর্যন্ত বিএনপি যতগুলো কর্মসূচি পালন করেছে, প্রতিটিতে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করছি, পরিস্থিত গণ–অভ্যুত্থানের দিকেই যাচ্ছে।’আবদুল আউয়াল মিন্টু, ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণ–অবস্থান কর্মসূচির দলনেতা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান
গণ–অবস্থান কর্মসূচি থেকে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে গতকাল সাত–দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। অনেকে নতুন কর্মসূচি হিসেবে জেলা পর্যায়ে সমাবেশসহ ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির প্রস্তাব করেছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গণ–অবস্থান যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে হয়, সে জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কার্যত জ্যেষ্ঠ নেতাদের নেতৃত্বে ১০টি বিভাগে এই কর্মসূচি হবে। গতকাল পর্যন্ত আট বিভাগের কর্মসূচিতে আটজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ঢাকা ও কুমিল্লার গণ–অবস্থান কার নেতৃত্বে হবে, তা আজ মঙ্গলবার তা ঠিক করা হবে। গতকালই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তাঁরা বেশ ক্লান্ত। তাঁরা যদি ঢাকার কর্মসূচিতে অংশ নেন, তাহলে কুমিল্লার কর্মসূচিতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি থাকবেন। অন্যথায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকার গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। অন্য আট বিভাগীয় কর্মসূচির মধ্যে সিলেটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান, রাজশাহীতে আবদুল মঈন খান থাকবেন। এ ছাড়া খুলনায় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান ও ফরিদপুরে আহমদ আযম খান অংশ নেবেন।
এই কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাইরে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ বিভাগের গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণ–অবস্থান কর্মসূচির দলনেতা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চলমান আন্দোলনকে ধাপে ধাপে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিতে চাই। এ পর্যন্ত বিএনপি যতগুলো কর্মসূচি পালন করেছে, প্রতিটিতে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করছি, পরিস্থিত গণ–অভ্যুত্থানের দিকেই যাচ্ছে।’
বিএনপির সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ–অবস্থান কর্মসূচি পালন করার অনুমতি চেয়ে গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। এ সময় ডিএমপির আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চার ঘণ্টার গণ–অবস্থান কর্মসূচি পালন করার অনুমতি চেয়েছি। ওনারা জনদুর্ভোগের কথা বলে কর্মসূচির ব্যাপারে নানা রকম যুক্তি দেখাচ্ছেন। ওনারা বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার (আজ) সকালে আমাদের জানাবেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বুধবার সরকারি কর্মদিবস। সেদিন রাস্তায় গণ-অবস্থান নিলে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হবে। তখন বিএনপির নেতারা পাল্টা জানতে চান, ওই দিন আওয়ামী লীগ দুটি জায়গায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে কী কোনো দুর্ভোগ হবে না? এ পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাহলে কাউকেই রাস্তায় কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না।
গত ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিএনপির ডাকে যুগপৎভাবে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছিল। তবে গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে থাকছে না দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস আখ্যা দিয়ে বুধবার ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালন করবে। তারা ঢাকাসহ সব বিভাগে আলোচনা সভার করবে।
কর্মসূচিতে এই ভিন্নতা কেন, জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো যুগপৎ আন্দোলনে আছি। তবে কর্মসূচিতে একটু ভিন্নতা হচ্ছে। কারণ, যুগপৎ আন্দোলনের মূল চেতনা হচ্ছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কর্মসূচি দেওয়া এবং তা পালন করা। বড় দল হিসেবে বিএনপি একা কর্মসূচি ঠিক করছে। জামায়াতও বড় দল হিসেবে নিজস্ব কায়দায় কর্মসূচি পালন করবে।’
২০২৩ সালে বিরোধী দলের প্রথম কর্মসূচি গণ–অবস্থান। এই কর্মসূচিতে সাড়া জাগাতে চায় বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বিগত দিনের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের যে উপস্থিতি, তাতে আমরা বুঝতে পেরেছি যে এ সরকারকে মানুষ আর দেখতে চায় না। আমরা এটাকে আরও গণমুখী করে মাধ্যমে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে চাই।’
গতকাল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাস সরাসরি নয়াপল্টনে আসেন। সেখানে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অভিবাদন জানান। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে আমাদের দমন করতে পারবে না। দেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে জেগে উঠেছে।’