ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে বের হয়ে আসছেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রতিনিধিরা
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে বের হয়ে আসছেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রতিনিধিরা

যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের স্মারকলিপি

সার্বভৌম দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সার্বভৌম কোনো দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। তাঁরা (স্মারকলিপি প্রদানকারীরা) আশা করেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অপতথ্য বন্ধ করতে ভারত সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও উসকানিমূলক অপপ্রচারের প্রতিবাদে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আজ রোববার বেলা সোয়া একটার দিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দুই কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এর আগে রাজধানীয় নয়াপল্টনে জড়ো হন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদযাত্রা রামপুরা ব্রিজের কাছে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকেরা নেতা-কর্মীদের সেখানে রেখে ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়। এরপর ভারতের অতি উগ্রবাদী নেতারা, বিশেষ করে কতিপয় সংবাদমাধ্যম শেখ হাসিনাকে আবার পুনর্বাসন ও বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের মতো কাজ করে যাচ্ছে। এতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা–বিরুদ্ধ হুমকি হয়ে উঠেছে। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন দলমতের মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাঁদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সংগঠনটির সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজারো মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল, তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রাপ্ত বিবরণ চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে হামলাকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে। সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তির ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম ও আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের (১৯৬১) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ন্যক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও ভারত সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। বাংলাদেশ পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শনের ওপর।