নির্বাচন ঠেকানো যাবে না, এই বার্তা দেবে আ.লীগ

আজ বেলা তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশ।

আগামী নির্বাচন সময়মতো হবে এবং তা বিরোধীরা ঠেকাতে পারবে না—আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশে বিশাল জমায়েত করে রাজপথে নিজেদের ‘শক্তি’ দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে আছে, সেটিও দেখাতে চায় দলটি।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ, বিএনপি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ঘোষণা দিতে যাচ্ছে আজ (দুপুরে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে দলটি)। এর অর্থ হচ্ছে দলটি নির্বাচন ঠেকানোর পথে হাঁটছে। এ ছাড়া দলটি বিদেশিদের কাছে এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন নেই। যে কারণে রাজপথে ধারাবাহিকভাবে বড় জমায়েত করে আওয়ামী লীগ দেখাতে চায় তাদের সঙ্গে জনগণ আছে।

আজকের সমাবেশের আয়োজক ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। কিন্তু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী এই সমাবেশে অংশ নেবেন। সেভাবে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীরাও সমাবেশে থাকবেন। সব মিলিয়ে এক লাখ লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে মহানগরের নেতাদের বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, আজকের দুই সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বা তাঁদের ওপর চড়াও না হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা আছে। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে নিজেরাও সংঘাতে না জড়ান, সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতায়, বিরোধী দলে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে পারে।
আহমদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

বায়তুল মোকাররমের সামনের সমাবেশ ও দলের পরবর্তী কৌশল নিয়ে গত রাতে আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ পাল্টা রাজপথে নামায় বিএনপি কিছুটা চাপে পড়ে। ফলে দলটির সরকারবিরোধী আন্দোলনে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে। বিএনপির মিত্র দলগুলোতেও কিছুটা আস্থার সংকট, অস্থিরতা দেখা গেছে। কিন্তু মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণা, দেশটির কর্মকর্তাদের একাধিকবার বাংলাদেশ সফর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৎপরতার মুখে বিরোধীরা নতুন করে রাজপথে নামার কৌশল নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ, বিএনপি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ঘোষণা দিতে যাচ্ছে আজ (দুপুরে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে দলটি)। এর অর্থ হচ্ছে দলটি নির্বাচন ঠেকানোর পথে হাঁটছে।

আওয়ামী লীগের আরেকজন নেতা বলেন, রাজপথে বড় জমায়েত দেখাতে হবে। নতুবা প্রশাসন ও দলের কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরতে পারে। এ ছাড়া এখন বিএনপি রাজপথ দখলে নিলে ভোট ঠেকানোর পথেও তারা এগিয়ে যাবে। ফলে রাজপথে ‘শক্তি প্রদর্শনের’ বিকল্প নেই।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপিসহ বিরোধীদের এক দফার আন্দোলন গত ডিসেম্বরের আন্দোলনের মতোই নিষ্ফল হবে, এটা প্রমাণ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলের নেতা-কর্মীদেরও সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে আজকের সমাবেশ থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। বিএনপির সমাবেশের এক ঘণ্টা পর আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার পেছনেও কারণ রয়েছে। বিএনপি কী বলে এবং কী কর্মসূচি নেয়, তা দেখে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিএনপির বক্তব্যের জবাবও থাকবে। এ ছাড়া বিএনপি কত লোক জমায়েত করতে পারে, সেটিও দেখার জন্য পরে সমাবেশের সময় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আজকের সমাবেশ সফল করতে গতকাল কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে প্রস্তুতি সভা করেছে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, দলের কর্মীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান মেনে সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিচলিত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখতে হবে। দলীয় কর্মসূচিতে বেশি সংখ্যায় মানুষের জমায়েত নিশ্চিত করতে হবে।

রাজপথে শক্তি দেখানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অলরাউন্ডার দল। ক্ষমতায়, বিরোধী দলে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে পারে। বিএনপিকে মাঠে একা খেলতে দেওয়া হবে না।’