‘গণবিদায়’ করতে হবে, গণভবনে–বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তর বাড্ডায় গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১১ আগস্ট
ছবি: দীপু মালাকার

শেখ হাসিনার সরকারকে ‘গণবিদায়’ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দফা এক, দাবি এক—এই সরকারের পদত্যাগ।’ আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত এক গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আর কোনো দাবি আছে?’ সবাই ‘না’ বলে জবাব দিলে তিনি স্লোগান ধরেন, ‘এক দফা এক দাবি’; নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা কবে যাবি।’ এবার ফখরুল বলেন, ‘তাঁকে গণবিদায় করতে হবে। ওই গণভবনে পৌঁছাতে হবে, বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।’

বেলা দুইটায় উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে এই গণমিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর বিকেল পৌনে চারটায় মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে গণমিছিল শুরু হয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মালিবাগের আবুল হোটেলের কাছে গিয়ে গণমিছিল শেষ হয়। তার আগে সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়কে এক পাশে একটি ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে নেতারা বক্তব্য দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মতো আবারও পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা মনে করেছে, এইভাবে ক্যারিকেচার করে ডিগবাজি খেয়ে খেয়ে চৌদ্দ আর আঠারোতে যে নির্বাচন করেছে, আবারও ওই নির্বাচন তেইশে ( ২০২৩) করে ক্ষমতায় যাবে। এ দেশের মানুষ যেতে দেবে?’

মির্জা ফখরুল এমন প্রশ্ন তুললে সবাই ‘না’ বলে জবাব দেন। এবার তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ; সব রাজনৈতিক দল; সব দেশপ্রেমী মানুষের একটাই আওয়াজ—সেই আওয়াজ হচ্ছে, এই অবৈধ ফ্যাসিবাদী হাসিনার সরকার নিপাত যাক, নিপাত যাক।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই আওয়ামী লীগের সরকার আমাদের সব অর্জনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। সংসদকে ধ্বংস করে দিয়েছে, প্রশাসনকে ধ্বংস করেছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে বিচার বিভাগকে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদের শুধু জেল দেয়, কারাগারে পাঠায়।’ তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যতই কারাগারে ঢোকাও, যত জেলে দাও, যতই নির্যাতন করো, যতই টিয়ার গ্যাস মারো, যতই লাঠিপেটা করো—এবার গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় না করে মানুষ ঘরে ফিরে যাবে না। সে জন্য শেখ হাসিনাকে সবার আগে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’

‘কী লজ্জাহীন এরা’

নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, কী লজ্জাহীন এরা। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে, দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। কেউ চেনে না। এ সময় সবাই ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে দুয়োধ্বনি দেন। কেন নিবন্ধন দিয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এদের দিয়ে তারা (সরকার) নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলবে। সেই খেলা এবার খেলতে দেওয়া হবে না। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবার ঐক্যবদ্ধ। এই গণমিছিলে আবার তাদের জানিয়ে দিতে চাই, তোমাদের দিন শেষ, পদত্যাগ করো।’

বিএনপির ঢাকা উত্তরের গণমছিলে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। ঢাকা, ১১ আগস্ট

পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার আমাদের লড়াই জীবনপণ লড়াই। কোনো ভয়ভীতি, জেল-জুলুম, কারাগার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। ইনশা আল্লাহ, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে জনগণের সরকার করতে সক্ষম হব।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বক্তৃতার কিছু নাই। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন? সবাই ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করার জন্য আজকে সমস্ত বাংলাদেশ প্রস্তুত। স্বৈরাচার যাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে, তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। যাদের ওপর নির্ভর করে আগামী দিনে স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে, তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে।’

এই সরকারের আমলে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। চলমান আন্দোলনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই লড়াই তখনই শেষ হবে, যখন শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। যখন আবার এ দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে, নির্ভয়ে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। সেই দিন এই লড়াই শেষ হবে। সেই লড়াইয়ে আমাদের বিজয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ।’