সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ চায় যুক্তরাষ্ট্র

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারে মতামত জানিয়েছে। এসব কিছু নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকাকে তারা গুরুত্ব দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী এবং অধিকারকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এসব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া দেশটির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসা উজরা জেয়ার সফরসঙ্গীদের মধ্যে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ছিলেন।

‘দেশে পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে জনগণের অধিকারসহ সব বিষয় নির্ভর করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহির ওপর। ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ

সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকের বাইরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি অধিকারকর্মী, শ্রমিকসংগঠন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গেও বৈঠক করে। বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার বিষয়েও জানতে চায়। এসব প্রতিষ্ঠানকে সক্ষম করে তুলতে সেগুলো পুনর্গঠন দরকার, নাকি নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে; সেটাও বুঝতে চায় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে।

নির্বাচনবিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সভায় বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান মতামত দেন। তাঁর মতে, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক দিনে এই অবস্থায় আসেনি।

এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর যে দুর্বল অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেটা দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফল। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর নির্বাচন সুষ্ঠু করা ছাড়া দেশের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধানও সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যেসব বিষয় এই সফরে তুলে ধরেছে; তা বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি বহিঃপ্রকাশ।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান

বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়। নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা নিয়েও অধিকারকর্মীদের মতামত চাওয়া হয়। তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের অধিকার এবং শ্রম পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যেসব বিষয় এই সফরে তুলে ধরেছে; তা বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি বহিঃপ্রকাশ। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় ভারত বা অন্য কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে দেখতে চাইছে না; বরং একটি স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছে। আর নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের চাপ আসতে পারে।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একজন অধিকারকর্মী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই আলোচনার বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল—সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলে দাবি করছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণা বলে দেয় যে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ভরসার সংকট আছে। এখন সেই ভরসা আনাটাই জরুরি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অধিকারকর্মী আরও বলেন, সবাই নিশ্চিত হতে চায় যে ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। ফলে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে জনগণের অধিকারসহ সব বিষয় নির্ভর করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহির ওপর। ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’