খুলনায় দলীয় ভোটারদের আটকাতে চায় বিএনপি

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো নেতা-কর্মী ভোটকেন্দ্রে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি।

আগামীকাল ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। গতকাল নগরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায় বিজিবি সদস্যদের। সকাল ১০টায় শিববাড়ি এলাকায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার দলীয় নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে চাইছে খুলনা মহানগর বিএনপি। কোনো নেতা-কর্মী ভোটকেন্দ্রে গেলে বিএনপি তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি নজরদারি করতে দলটি খুলনা নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে তদারক দল গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতা-কর্মী-সমর্থকদের তৎপর থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে থেকে বিএনপি এবার সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। কিন্তু কাউন্সিলর পদেও দলের নেতা-কর্মীদের প্রার্থী না হওয়ার জন্য কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছিল বিএনপি। এরপরও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হওয়ায় এরই মধ্যে ৯ জনকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারকাজে অংশ নেওয়ায় ১১ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এখন দলটি আরও কঠোর অবস্থানে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে গেলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।

বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ভোটার উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সাধারণ মানুষ বিএনপির কাছে জিম্মি না। অনেক সময় তারা বিএনপির সন্ত্রাসকে ভয় পেয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। কিন্তু খুলনার নির্বাচনে কেউ সন্ত্রাস করতে পারবে না।
এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ 

খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট আগামীকাল সোমবার। মেয়র পদে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এরই মাঝে বিএনপির ভোটার ঠেকাতে দলটির পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিএনপির ওই পদক্ষেপকে অগতান্ত্রিক বলছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও সাধারণ ভোটারদের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের জন্য এখন খুলনায় রয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির এই সিদ্ধান্তে ভোটার উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সাধারণ মানুষ বিএনপির কাছে জিম্মি না। অনেক সময় তারা বিএনপির সন্ত্রাসকে ভয় পেয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। কিন্তু খুলনার নির্বাচনে কেউ সন্ত্রাস করতে পারবে না।

গতকাল শনিবার নগরের কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে মহানগর বিএনপির এক সভায় দলের সদস্যসচিব শফিকুল আলম নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে নেই। কে মেয়র হলো, কে কাউন্সিলর, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। ভোটের দিন আপনারা বাড়িতে বিশ্রাম নেবেন, দলীয় কার্যালয়ে থাকবেন, দরকার হলে শহরের বাইরে ঘুরতে যান।’

বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের নেতা-কর্মীদের নজরদারিতে রাখতে প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠিত ২১ সদস্যের তদারক দল কাজ শুরু করেছে। এই তদারক দলের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দলের ভোটারদের ব্যাপারে তাঁদের খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে। ছবি তুলতে বলা হয়েছে। আর ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে ভোটার তালিকা থাকে। সেখান থেকে কারা ভোট দিচ্ছেন, তা বোঝা যায়। বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টদের কাছ থেকে ওই তালিকা সংগ্রহের চেষ্টা থাকবে।

খুলনায় বিএনপির কোনো মেয়র প্রার্থী না থাকায় জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের ভোটবাক্সে বিএনপির ভোট যাবে বলে ওই দুই দলের প্রার্থী দাবি করে আসছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমানও বিএনপির ভোটার নিয়ে আশাবাদী।

খুলনা নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা বলেন, দল অংশ না নিলেও স্থানীয় নির্বাচনে দলের অনেকে নানা কারণে ভোট দিতে যেতে চান। তবে দলের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকেই ভোট দিতে যাবেন না।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ভোটে অংশ নেওয়া সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তাঁরা দেখছেন। ফলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে না বলে তাদের বিশ্বাস।