ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে না চাওয়ায় গণ অধিকার পরিষদকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সভাপতি নুরুল হক (নুর)। নির্বাচন কমিশন আজ রোববার নতুন দলগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ অভিযোগ করেছেন তিনি।
নুরুল হক দাবি করেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁদের সমঝোতার জন্য ডেকেছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করাতে চেয়েছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, গণ অধিকার পরিষদ যদি তাঁদের সঙ্গে একমত হয় এবং নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে নিবন্ধন দেওয়া হবে। কয়েকটি আসনও দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা বলেছিলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না।
গণ অধিকার পরিষদের নেতারা দলের নিবন্ধন–সংক্রান্ত কিছু নথি নিয়ে আজ সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ইসি প্রাথমিকভাবে বিএনএম ও বিএসপিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল নিবন্ধন পাচ্ছে না বলে তখনই নিশ্চিত হয়। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের শর্ত ছিল ২২টি জেলায় কমিটি থাকতে হবে। তাঁদের ৫৩টি জেলায় কমিটি আছে। ইসির শর্ত ছিল ১০০ উপজেলা কমিটি থাকতে হবে, কিন্তু তাঁদের ২০০–এর বেশি উপজেলা কমিটি আছে। তারপরও তাঁদের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কোথায় কেউ কি জানেন?
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল গণ অধিকার পরিষদ। মোট ৯৩টি দল এই আবেদন করলেও গণ অধিকারসহ তাদের সমমনা কয়েকটি দলের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি রয়েছে।
নুরুল হক দাবি করেন, সাক্ষাতে সিইসির কথাবার্তায় একটু অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভালো কিছু করার চিন্তাভাবনা করলেও পরিস্থিতির কারণে করতে পারছেন না। তাঁর হাত-পা বাধা। সিইসির কথাবার্তা ও কার্যক্রমে সেটা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, তিনি (সিইসি) এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি যেটি বলেছেন সেটি হলো, সব কিছু আসলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাঁর কিছু করার নেই। তবে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের এ মন্তব্যের বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানা যায়নি।
ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যেতে না চাওয়ায় তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাশেদও। তিনি দাবি করেন, তাঁদের বলা হয়েছিল, যদি গণ অধিকার পরিষদ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়, তাহলে নিবন্ধন দেওয়া হবে। কারা এমনটি বলেছিল— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমন পরামর্শ দিয়েছিল।’
নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গণ অধিকার পরিষদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কোনো ভূমিকা আছে বলে মনে করেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘দলগুলোর নিবন্ধনে যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক একজন উপসচিব ও অতিরিক্ত জেলা জজ, যিনি আইনকানুন সম্পর্কে ভালো বোঝেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে দেখেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে কী দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের কপি আমাদের হাতে আছে। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখে দিয়েছেন, গণ অধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’
এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ তা প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেন নুরুল হক। নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচিত দল দুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এরা কোথা থেকে নিবন্ধন পেল, কারা এদের বানাল? শেখ হাসিনা সরকার বানিয়েছে, এই ১৪ দল থেকে যেন আগামীতে ২০ দল হতে এবং বিএনপিকে টেক্কা দিতে পারে। তাই এজেন্সির পরামর্শে নির্বাচন কমিশন এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে।’
এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না বলে মন্তব্য করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসির এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতে যাবেন না। কারণ, এই সরকারের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। তাঁরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের দাবি আদায় করবেন।
বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। সরকারবিরোধী আন্দোলনের মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এলেও বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে তারা।