নির্বাচন–পরবর্তী চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেছেন, দুরভিসন্ধিমূলকভাবে চালসহ নিত্যপণ্য মজুত করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভার সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারও আমাদের ফসল ভালো হয়েছে, চাল উৎপাদন বেড়েছে। তার পরেও হঠাৎ দাম বাড়াটা, এ রকম ভরা মৌসুমে এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এটার পেছনে কারা আছে একান্তভাবে বের করা দরকার। শুধু দরকার না, এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা আমরা ভবিষ্যতে করব।’
অবৈধভাবে মজুতকারীদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে বাজারে দেওয়ার জন্য মজুত করতে হয়। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে মজুত করে রাখা বা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে মজুত করে রাখা, এ রকম যাকেই পাওয়া যাবে, মোবাইল কোর্ট লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যতে আমরা সেই ব্যবস্থাটাই নেব। এখন থেকে প্রথমে ওই জায়গাতেই আঘাত করতে হবে।’
ডিমও মজুত করে রাখা হয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এর আগে একটার পর একটা পচা পেঁয়াজের বস্তা ফেলে দেওয়া হলো। এটা কোন ধরনের কথা? মানুষের খাবার নিয়ে খেলা, এর তো কোনো অর্থ হয় না। আর এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ারও কথা না। এ সময় তো আরও কমে জিনিসের দাম।’
মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অযথা একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে, কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেল, জিনিসের দাম বেড়ে গেল। আমরা জানি করোনাভাইরাসের অতি মারির কারণে, এর পরে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ, এর পরে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞার কারণে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত দেশগুলোও ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না।’
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও বলেন, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, গ্যাস—এগুলো আমাদের ক্রয় করতে হয়। কারণ, এগুলো দেশে যা আছে, তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম। এগুলোর উচ্চ মূল্য, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, সে কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
তরি-তরকারি ও ফলমূল সরবরাহের কোনো অভাব নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো কৃষিপণ্যের দাম বাড়লে ভোক্তার কষ্ট হয়। কৃষক যদি দামটা পায়, তারা খুশি হয়। কৃষক ন্যায্য দামটা পাচ্ছে। কিন্তু যে দামটা পরিবহন সব মিলিয়ে হওয়া উচিত, তার চেয়ে অতিরিক্ত বেশি। সেই জন্য দুরভিসন্ধি নিয়ে যদি কেউ মজুত রাখে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নেব। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
নির্বাচন শেষ হওয়ার পর নানা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আরও কিছু চেষ্টা করা হয়েছে, গার্মেন্টসের মজুরি বাড়ানো হলো, তার পরেও রাত ১২টা বাজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। এটা করে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়ে এখন অন্যভাবে নামতে চাচ্ছে। সেভাবে করতে দেব না।’
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ আনন্দিত, খুশি। এই পর্যন্ত যে উন্নয়নটা করেছি, এর সুফলটা যেন জনগণ পায়, এই চেষ্টা টাই করছি।’
উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন আসছে। কীভাবে নির্বাচনটা হবে, এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। নির্বাচন যত হবে, মানুষের ভোটের অধিকার তত নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু আঁতেল শ্রেণি আছে। তাদের বোধ হয় কিছুই ভালো লাগে না। যা কিছুই ঘটুক, তাদের সবকিছুই খারাপ লাগে। কী হলে যে তাদের ভালো লাগবে, সেটা আমি জানি না। তারা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সব সময় আশা করে। তবে ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশে কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে না। আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’
দেশের উন্নয়ন বজায় থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাধা দিতে চেষ্টা করবে, তারা যাতে উপযুক্ত জবাব পায়, সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে। সেটা রাজনৈতিকভাবে কিংবা অন্য যেকোনোভাবে সেটা করতে হবে। কারণ, দেশের মানুষ স্বস্তি পেয়েছে গত ১৫ বছরে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা। এতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।