গঠনের পাঁচ মাস না যেতেই গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়। মূলত নেতৃত্বের বিরোধ থেকে অসন্তোষের কারণেই এই শঙ্কা। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে প্রথম তিনটি কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মনোমালিন্য দৃশ্যমান হয়। তবে আজ বুধবার চতুর্থ কর্মসূচিতে মঞ্চের প্রায় সব শীর্ষ নেতা একত্রে অংশ নেন৷ তাঁরা ঘোষণা দেন, গণতন্ত্র মঞ্চ আছে, থাকবে।
গত ৮ আগস্ট সাতটি দল ও সংগঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সব দল ও জোট তিনটি কর্মসূচি পালন করে। দেখা গেছে, তিনটি কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন না গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণ অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া বা নুরুল হক।
১১ জানুয়ারির ‘গণ–অবস্থান’ কর্মসূচি ঘিরে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের মনোমালিন্য দৃশ্যমান হয়। গণ অধিকার পরিষদ দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৬ জানুয়ারির বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়নি।
গণতন্ত্র মঞ্চে রয়েছে আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলামের ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও হাসনাত কাইয়ুমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দল।
দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নির্যাতন, নিপীড়ন, দমনের প্রতিবাদ ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ছাড়া জোটের অন্য দলের নেতৃত্বস্থানীয় নেতারা সবাই উপস্থিত ছিলেন। অসুস্থতার কারণে আবদুর রব উপস্থিত থাকতে পারেননি।
সমাবেশে মঞ্চের নেতারা জোটের টানাপোড়েন ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বক্তব্য দেন। নেতৃত্বের বিরোধ মূলত গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে মঞ্চের অন্য দলগুলোর নেতাদের। গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের জনবলই বেশি থাকে। অথচ তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।
গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক বলেন, শুধু আন্দোলন নয়, একটি পরিবারেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হতে পারে। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেই এসব সমাধান করতে হবে। সরকারকে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ দেওয়া হবে না। গণতন্ত্র মঞ্চ আছে, থাকবে। বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো নেতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও সমাবেশ আয়োজন করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের নেতারা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার বিরোধীদের আন্দোলন নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে৷ এই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিকভাবে সরকারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে৷ গণতন্ত্র মঞ্চ জনগণের সামনে নতুন কিছু তুলে ধরেছে।
দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নির্যাতন, নিপীড়ন, দমনের প্রতিবাদ ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ। যুগপৎ আন্দোলনের এটি হবে পঞ্চম কর্মসূচি। আরও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন নেতারা।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘কিছু বিভ্রান্তি দূর করতে চাই। আন্দোলন ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হয়। এক দিনেই পরিবর্তন আসে না। আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই ধরনের কর্মসূচি একাধিকবারও দিতে হয়। শুধু এক নেতার নামে স্লোগান দিলে হবে না। সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। আগামী কর্মসূচি আরও প্রস্তুতি নিয়ে বড় আকারে করা হবে।’
কয়েক দিন ধরে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মনোমালিন্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জোটে ভাঙনের শঙ্কাও তৈরি হয়। মঞ্চের শীর্ষ নেতারা এসব আলোচনাকে দূরে ঠেলে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দেন।
গণতন্ত্র মঞ্চে রয়েছে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, নুরুল হকের গণ অধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলামের ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও হাসনাত কাইয়ুমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।