২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে ২৮ মামলা, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ নেতা আসামি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ঢাকা, ২৯ অক্টোবর
ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীতে শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় ২৮টি মামলা হয়েছে। একাধিক মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে। দলের শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ নেতাকে কোনো না কোনো মামলার আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

মামলাগুলো হয় গতকাল রোববার। এসব মামলায় পুলিশকে হত্যা ও হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় গতকাল গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে পুলিশ হত্যাসহ অন্তত চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস

মির্জা ফখরুল ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লা বুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অনেকে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় করা মামলায় গতকাল গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে পুলিশ হত্যাসহ অন্তত চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলার বেশির ভাগের বাদী পুলিশ সদস্যরা। কয়েকটি মামলার বাদী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন রাজধানীতে ২৮টি মামলা হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ডিএমপির রমনা বিভাগে ১টি, মতিঝিল বিভাগের বিভিন্ন থানায় ১১টি, ওয়ারীতে ৩টি, তেজগাঁওয়ে ২টি, মিরপুরে ৭টি, গুলশানে ৩টি ও উত্তরা বিভাগে ১টি মামলা করা হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারের ঘটনায় মোট ৬৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ৮ দিনে রাজধানীতে সর্বমোট ১ হাজার ৪৮০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালত সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৭৫ জনকে।

এজাহারে যা আছে

২৮ মামলার ৮টির এজাহার পাওয়া গেছে। এসব এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মামলাগুলোতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আট মামলায় আসামি মোট ২ হাজার ১৩৬ জন।

রমনা থানায় করা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় গ্রেপ্তার মির্জা ফখরুলকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৭১ এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির মহাসমাবেশে আসেন। দলটির শীর্ষ নেতা-কর্মীরা হাতে লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ইটপাটকেল, ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বে-আইনি সমাবেশ করেন। তাঁরা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে একাধিক বাস, জিপ ও পিকআপ ভাঙচুর চালান। পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়েন ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। তাঁরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। আসামিরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের নামফলকসহ ভবনটির বিভিন্ন জায়গা ভাঙচুর চালান।

হামলা চলাকালে ৪২ জনকে আটক করার কথা জানিয়ে পুলিশ এজাহারে লিখেছে, জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারীরা পুলিশের কাছে স্বীকার করে বলেছেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নির্দেশে তাঁরা এই নির্মম ও নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

শাহাজাহানপুর থানায় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে করা অন্য একটি মামলার বাদী হন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। এই মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলাটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রধান আসামি করা হয়। মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে করা হয় হুকুমের আসামি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

মামলা শুরু হয়েছে, অনেকেই দেবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ, আগুন, ভাঙচুর, পুলিশ সদস্য নিহত ও অনেকে আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা শুরু হয়েছে এবং অনেকেই মামলা দেবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সচিবালয়ে গতকাল সকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুরো ঘটনাটিকে বর্বরোচিত ও জঘন্য উদাহরণ বলে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মামলা শুরু হয়েছে। অনেকে মামলা দেবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা মামলা দেবে। পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দেবে। পুলিশ মামলা দেবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন তাঁরা মিটিং করেছেন, তাঁরা মিটিংয়ে যখন বসেছিলেন, তখনই ঘটনাগুলো (গতকালের ঘটনা) ঘটেছে। তাহলে এর দায় কি তাঁরা এড়াতে পারেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার বারবার বলেছেন সমাবেশের সীমা কোন জায়গা পর্যন্ত। তার বাইরে এসে প্রধান বিচারপতির বাড়ি আক্রমণ করবেন, পুলিশ হত্যা হলো, পুলিশের কাছ থেকে জোর করে তিনটি অস্ত্র নিয়ে গেছেন—এই দায় কি এড়াতে পারবেন?’

শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর রাতে বিএনপির মহাসচিব একটি বিবৃতি দেন। এতে তিনি বলেন, সরকার বিএনপির মহাসমাবেশে বিপুল মানুষের সমাগম দেখে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করে হামলা করিয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বারবার বলেছেন সমাবেশের সীমা কোন জায়গা পর্যন্ত। তার বাইরে এসে প্রধান বিচারপতির বাড়ি আক্রমণ করবেন, পুলিশ হত্যা হলো, পুলিশের কাছ থেকে জোর করে তিনটি অস্ত্র নিয়ে গেছেন—এই দায় কি এড়াতে পারবেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান