১৪ বছর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় ঢুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৪০ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মারধরের শিকার মহিলা দলের সদস্য সানজানা চৈতী বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ মামলা করেন।
সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন বাদীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসিকে) নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন মির্জা আব্বাসের বাসায় ঢুকে র্যাব-পুলিশের যেসব সদস্য হামলা, ভাঙচুর ও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিলেন, সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে আসামিদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র উঠে এসেছে।
সাবেক আইজিপি একে এম শহীদুল হক ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার (পরে আইজিপি), র্যাবের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান (পরে এনটিএমসির প্রধান), র্যাবের সাবেক গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েল (পরে চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান), সিআইডির কনস্টেবল রমজান, মতিঝিল থানার সাবেক এসআই মোক্তার হোসেন, আবদুল কাদের, হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমান, কনস্টেবল মো. তাহের, কনস্টেবল আবুল হোসেন, কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম, দবিরুল, বাদল, সারোয়ার, ইউসুফ, হাবিলদার মতিউর, কনস্টেবল ফারুক, আশরাফ, নজরুল, রফিকুল, আমান, রফিকুল (এক), জাকির, নুরুল, কাইয়ুম, শফিকুল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাফজুর রহমান, র্যাব-৩ এর সাবেক ডিএডি রফিকুল ইসলাম, র্যাব-৩ এর কামাল হোসেন, মতিঝিল থানার এসআই নাজমুল হোসেন, এএসআই জালাল হোসেন, এএসআই কাজী রেজাউল করিম, মাইন উদ্দিন, আবদুস সালাম, নাজির উদ্দিন, এজাজ শফি, মো. জাফর, আমিনুল ইসলাম ও সমীর চন্দ্র সূত্রধর। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জন র্যাব ও পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সালের ২৭ জুন বিএনপির ডাকা শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি ছিল। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ভয় দেখানোর জন্য সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশে শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাসায় হামলা চালানো হয়। র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা মির্জা আব্বাসের বাসায় প্রবেশের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যান। এরপর র্যাব-পুলিশ বাসার ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়।
মামলার আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়, র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান নির্দেশ দেন, যাঁকে যেখানে পাওয়া যায়, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করতে। তখন গোপন সংবাদ পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান মির্জা আব্বাস।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, হরতাল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মহিলা দলের সদস্য সানজানা চৈতী সেদিন অন্য নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মির্জা আব্বাসের বাসায় অবস্থান করেন। র্যাব-পুলিশ সদস্যরা বাসায় ঢুকে সানজানা চৈতীকে বেধড়ক পেটান। একই সঙ্গে মির্জা আব্বাসের ৯০ বছর বয়সী মাকেও গালিগালাজ করেন র্যাব-পুলিশ সদস্যরা। পরে তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয় বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। র্যাব-পুলিশ সদস্যদের লাঠির আঘাতে বাদীসহ ১৫ থেকে ১৬ জন দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।