উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন। একই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে খোলাচিঠি দিয়েছে তারা। চিঠিতে বলা হয়েছে, উদ্ভূত সংকটের সমাধান, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকেই করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন এই খোলাচিঠি পাঠিয়েছেন। এর অনুলিপি গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়।
খোলাচিঠিতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, ‘সারা দেশ আজ এক প্রকট রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সর্বজনের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অবাধ, প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টা সবার মধ্যেই থাকবে। কিন্তু আমাদের হতাশ হতে হয়েছে। ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নবায়ন ব্যতীত আর কিছুই জনগণকে দিতে পারবে না।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি সংসদীয় শাসনপদ্ধতির অন্যতম পূর্বশর্ত হওয়া সত্ত্বেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আগের মতো একটা ‘পুতুল’ বিরোধী দলও গড়ে তোলা মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ, অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ অনুপস্থিত বলে বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে। সরকারি দলের সঙ্গে বা সরকারি দলের সমর্থন নিয়ে যে দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, সেগুলো নামমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এসব সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবেই নিবন্ধন দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো সাক্ষী, আসনগুলো নির্বাচনের আগেই ভাগাভাগি হয়ে গেছে! বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের চাপ সামলাতে এবং এ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে ‘ডামি’ প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে। বলা যায়, এ নির্বাচন এমন এক কৌশলে হতে চলেছে, যে বা যারাই নির্বাচনে জিতুক না কেন, তাদের সবাই হবে ক্ষমতাসীন দলের লোক।
বিভিন্ন পরিস্থিতি তুলে ধরে খোলাচিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সবকিছু মিলিয়ে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৭ জানুয়ারি আমরা ২০১৪ ও ২০১৮-এর মতো অগ্রহণযোগ্য আরেকটি নির্বাচন দেখতে চলেছি এবং নির্বাচনের ফলাফল কী হতে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশের অর্থনীতির অবস্থা এবং ভূরাজনৈতিক বিন্যাসে বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনায় এ রকম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশের ভবিষ্যৎকে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা মনে করি, উদ্ভূত সংকটের সমাধান, গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকেই করতে হবে।’