জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির নেতারা। ১০ বছর পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জাতীয় পার্টির ইফতার অনুষ্ঠানে এবার অংশ নিলেন। রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে আজ রোববার এ ইফতার অনুষ্ঠান হয়। এতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়াও রাজনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা অংশ নেন।
তবে এমন আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন না জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং তাঁর ছেলে সংসদ সদস্য রাহগির আল মাহি (সাদ এরশাদ)।
ইফতার অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার, চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে, নেদারল্যান্ডসের উপরাষ্ট্রদূত দাইজ ওজট্রা, ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চারুসি, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি, কসোভোর রাষ্ট্রদূত গুনের উরেয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব মিশন ব্রেন্ড স্পাইনার এবং ভারতের উপহাইকমিশনার বিজয় জর্জসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা অংশ নেন।
এ ছাড়া রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আবদুস সালাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেসএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নান, এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ প্রমুখ।
ইফতার অনুষ্ঠানে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বপরিস্থিতি এক ভয়াবহ অবস্থা অতিবাহিত করছে। আমরা চাই পবিত্র রমজানে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমরা যেন এই পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৩টি দেশের ২২২ বিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। এ ছাড়া জ্বালানিসংকটে বিশ্ব হুমকির মুখে পড়বে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো–চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন, সালমা ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুল ইমাম, শেরিফা কাদের প্রমুখ।
দীর্ঘ সময় পর জাতীয় পার্টির কোনো অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খোলামনে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে চাই। রাজনীতির মাঠে সম্পর্ক যা–ই থাকুক না কেন, আমরা চাই রাজনীতিকদের মধ্যে দূরত্বটা কমুক, অন্তত সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরস্পর কাছাকাছি আসুক।’
অবশ্য ইফতার অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান দুটি দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা পাশাপাশি টেবিলে বসেন এবং কুশল বিনিময় করেন।