দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যে গোলমাল তৈরি হয়েছে, তা দ্রুতই নিরসন করা হবে বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। জোটের সমস্যা সমাধানে ঈদুল আজহার আগেই আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু তাঁর বাসভবনে জোটের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে যেটুকু গোলমাল হয়েছে, তা নিরসন করার জন্য শিগগিরই ১৪ দলের নেতাদের বৈঠক হবে। সেগুলো নিরসন করে ঈদের পর থেকে ইতিবাচক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে ১৪ দল।
জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে আজকের বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ১৪ দল সাম্প্রদায়িক শক্তি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি আদর্শিক জোট। এটা কোনো চাওয়া-পাওয়ার জোট নয়। সেই আদর্শের জোট হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি।’
দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল আছে, থাকবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে বলে মন্তব্য করেন জোটের সমন্বয়ক। তিনি বলেন, আদর্শিক যে সংঘাত, সেই সংঘাতের শক্তিরা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত, সেটা মোকাবিলা করা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়ে আমির হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় সিন্ডিকেট আছে। যদি সিন্ডিকেট থেকে থাকে, সরকারের জানা থাকলে তাদের বিষয়ে সক্রিয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে জনগণ যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসুবিধায় আছে, এর সুরাহা হয়।
ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়ে আমু বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) স্থির থাকতে পারেন, ১৪ দল ছিল, আছে এবং থাকবে। যে শক্তির বিরুদ্ধে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল, সেই শক্তি এখনো তৎপর, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত এবং থাকব।’
এক প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সরকার তৎপর। এই ব্যাপারে তাদের বক্তব্যের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না। এটা রাজনৈতিক ব্যাপার নয়।
দায়িত্বে থাকাকালীন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ কীভাবে দেখেন, এমন প্রশ্নে আমু বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ সরকার প্রমাণ করবে। প্রমাণ থাকলে, শাস্তি হবে।’
আপনারা বিব্রত কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা বিব্রত নই। কারণ, মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে, দেশের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ দুর্নীতি করে এবং ধরা পড়লে তার জন্য আমাদের বিব্রত হওয়ার কারণ নেই। যারা দোষী, ধরা পড়বে, শাস্তি পাবে। তার জন্য আমরা বিব্রত হব কেন?’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় ১৪ দল অবস্থান নিয়েছে। এবারও যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, এর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। এই দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে সরকারের যে অর্জন রয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হবে। সেটা বেনজীর হোক, আজিজ হোক।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু; জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার; তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।