বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে নেতা–কর্মীদের সামনে কেঁদে ফেললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্যের শুরুতেই এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ করে বিএনপি। প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল হাসপাতালে নেত্রীকে দেখে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এ সময় কাঁদতে কাঁদতে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল খালেদা জিয়াকে যেমনটি দেখেছেন, এমন অবস্থা আগে দেখেননি। প্রথমবারের তাঁর মনে হয়েছে চেয়ারপারসন অনেক বেশি অসুস্থ।
গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তিনবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেছেন আপনাদের কিছু করার থাকলে করেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। অবিলম্বে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারলে বাঁচানো দুষ্কর হবে।’
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। এর মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁকে দুই দফায় করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও এর আগে জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
সমাবেশে বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তা না করলে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, বিএনপির ক্ষতি হবে না। দেশের ক্ষতি হবে।’
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন থেকে আন্দোলন “ডু ওর ডাই” (মরো, না হয় বাঁচো), এর মাঝামাঝিতে কোনো ঠাঁই নাই।’ দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মরতে হলে মরতে হবে, গুলি খেতে হয় খেতে হবে, এরপরও এ সরকারকে সরাতেই হবে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এমন মামলায় জামিন দেওয়ার হাজারো উদাহরণ আছে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হলে খালেদা জিয়া কেন জামিন পাবেন না। তাঁকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের তিন নেতা জামিন পেয়েছেন। আর খালেদা জিয়ার বেলায় বললেন মুক্তি দেবেন না। দেশের মানুষ এর বিচার করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে সাবেক আমলারা গোপনে সভা করেছেন উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সেখানে তাঁরা বলেছেন রক্তপাতের বিনিময়ে হলেও আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও গোপনে সভা করছেন দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘ওই সভায় তাঁরা বলছেন খুনখারাবি করে হলেও বিএনপিকে প্রতিহত করতে হবে।’ গোপনে এসব সভা না করে প্রকাশ্যে এসব সভা করার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান প্রমুখ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। আর সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল।