এখনই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে—সেই ধরনের কোনো চিন্তা ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদস্যপদ পেতে সেই ধরনের চেষ্টাও করা হয়নি বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আজ মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ কোন কোন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সফরের অর্জন নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে দেওয়া বিশ্বনেতাদের চিঠির জবাব দেন শেখ হাসিনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের প্রশ্ন ছিল—ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়া না–পাওয়া নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আমরা আদৌ আবেদন করেছিলাম কি না? আবেদন করার পদ্ধতি আছে কি না? বাংলাদেশ সব সময় মধ্যপন্থা নীতি অবলম্বন করে। কোয়াডে যেমন যাইনি, ব্রিকসেও সে বিবেচনায় গেলাম না—এমন একটি আলোচনাও আছে। কেউ বলছে, আমরা সদস্যপদ পাইনি, আমাদের দেওয়া হয়নি। আপনার কাছ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হতে চাই।
এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনই সদস্যপদ পেতে হবে, সেই ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। চাইলে পাব না, সেই অবস্থাটা নেই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি কাজের একটা নিয়ম থাকে। সেই নিয়ম মেনেই চলে সরকার। তাঁর সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হয়, তখনই ব্রিকস সম্মেলনে আমন্ত্রণ করেন। তখন এ–ও জানালেন যে তাঁরা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেন। সেই বিষয়ে মতামতও জানতে চাইলেন।
ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যখন শুনলাম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হবে, আমাদের ওটার ওপর বেশি আগ্রহ ছিল। যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকেই এই আগ্রহটা ছিল এর সঙ্গে যুক্ত হব। ব্রিকসের সদস্যপদের ক্ষেত্রে তখন প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন ধাপে ধাপে নেবেন। ভৌগোলিক অবস্থানটা বিবেচনা করে নেবেন। পর্যায়ক্রমে সদস্যসংখ্যা বাড়াবেন।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, নিলে আমরা খুব খুশি। তবে আমরা ওইভাবে ব্রিকসের এখনই সদস্যপদ পাব, প্রথমবারেই গিয়েই সদস্যপদ পাব, সেই ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না। সেই ধরনের চেষ্টাও আমরা করিনি। সেইভাবে কাউকে বলিনি। সেখানে তো আমার সব রাষ্ট্রপ্রধান–সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা, কথা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে। আমরা কাউকে বলতে যাইনি আমাকে এখনই সদস্য করেন।’
ব্রিকস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি যে এই প্রশ্নটা আসবে। আমাদের অপজিশন থেকে হা-হুতাশ করছে যে আমরা পাইনি। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা মর্যাদাটা তুলে ধরেছি। সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপির আমলে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়।’