আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা, নির্বাহী সদস্য পদে চমক

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৭৮টি পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ জনের পদ ঘোষণা করা হয় ২৪ ডিসেম্বর দলের জাতীয় সম্মেলনে। আজ রোববার ফাঁকা ৩৩টি পদের মধ্যে ৩০টিতে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনটি পদ এখনো ফাঁকা আছে।

একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদেও নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৪৬। দলের গঠনতন্ত্রে অবশ্য উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা সর্বনিম্ন ৫১ উল্লেখ আছে। দলীয় সভাপতি চাইলে আরও বেশি নেতাদের স্থান দিতে পারবেন।

আজ রোববার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা হয়। ওই সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্যাডে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নতুন একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি সাবেক সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা হক। এর বাইরে সভাপতিমণ্ডলীর নামের ক্রমে শীর্ষ স্থান দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের মোশাররফ হোসেনকে। আগে শীর্ষে ছিলেন প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এর বাইরে আর বড় পরিবর্তন নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলী ১৯ সদস্যের। এখনো একটি পদ ফাঁকা আছে।

সম্পাদকমণ্ডলীর ৩৪টি পদের বেশির ভাগ সম্মেলনের দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর গত সপ্তাহে ক্রীড়া সম্পাদক পদে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদে আজও কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। উপপ্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। তিনি এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই আছেন। তবে নামের ক্রমে সবার শীর্ষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আগে শীর্ষে থাকা মাহবুব উল আলম হানিফ দুইয়ে নেমে গেছেন। তিনে উঠে এসেছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আর দুই থেকে চারে নেমে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সাংগঠনিক সম্পাদকের সব পদ আগেই পূরণ করা হয়েছে।

নির্বাহী সদস্য

সম্মেলনের দিন ২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যের পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আজ ২৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আলোচিত নাম মো. এ আরাফাত, তারানা হালিম ও তারিক সুজাত। এ আরাফাত টেলিভিশন টক শোতে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য বেশ পরিচিত। এ ছাড়া দলটির গবেষণাধর্মী কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারানা হালিম ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তারিক সুজাত জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

এর বাইরে সদস্য হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। তাঁদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন গত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁকে বাদ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে রেখে দেওয়ার পেছনে বগুড়ার একমাত্র নেতা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। আবদুল মান্নান মারা যাওয়ায় এবং মাহমুদুর রহমান (মান্না) দল ছাড়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বগুড়ার কেউ ছিলেন না।

নির্মল চ্যাটার্জি বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি। আওয়ামী লীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে শুধু রিয়াজুল কবির কাউসার এবার নেই। তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির কোথাও রাখা হয়নি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের নাম জাতীয় সম্মেলনের দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল। আজ নতুন করে তিন নারীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও মাজেদা রফিকুন্নেছা।

এর মধ্যে সাদেকা হালিম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন। এর আগে তিনি তথ্য কমিশনার ছিলেন। ফারজানা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তাঁর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনা হয়।
 
মাজেদা রফিকুন্নেছা ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিজ পরিবারের তিন সদস্যকে দূতাবাসে নিয়োগ দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন মাজেদা রফিকুন্নেছা। তাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভিসা ফি আদায়ের অভিযোগও উঠেছিল।