সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই পর্বের আলোচনা শেষ করেছে বিএনপি। সব মিলে ৩৯টি দল ও জোটের সঙ্গে এই আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা শরিকদের মতামত ও প্রস্তাব সামনে রেখে নতুন কর্মকৌশলে সামনের পথচলা এবং কর্মসূচি প্রণয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
গত শুক্রবার অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ পর্বের আলোচনা শেষ হয়।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, গত জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর এই বৈঠকগুলোর লক্ষ্য মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে সক্রিয় এবং একসঙ্গে আছে, জনগণের কাছে সে বার্তা দেওয়া। সেই সঙ্গে বিরোধী দলগুলো আবার রাজপথে কীভাবে একত্র হবে, সেই প্রক্রিয়া এবং কর্মসূচি ঠিক করা। কার্যত এই দুটি মৌলিক বিষয় সামনে রেখেই বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব বৈঠকে ‘জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘ভারতবিরোধিতা’ প্রশ্নে শরিকদের কারও কারও মধ্যে নতুন করে বিতর্ক উঠেছে। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিব্রত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ দুটি বিষয় নিয়ে স্পষ্ট বিভক্তি আছে একাধিক শরিক দল ও জোটের মধ্যে। যদিও বিএনপি বৃহত্তর ঐক্য ও সামনের আন্দোলনের স্বার্থে দুটি বিষয়ে ওঠা বিতর্ককে এড়িয়ে এগোতে চায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে যে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে, তা হচ্ছে একদিকে কিছু দল ও জোটের যুগপৎ আন্দোলন। যুগপতের বাইরেও অনেক দল আন্দোলন করছে। এই সমীকরণই থাকা উচিত। জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বাস্তবতা নেই। এতে বিভাজন তৈরি হবে।
যদিও ১২-দলীয় জোট এবং অলি আহমদের এলডিপিসহ আরও কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করে সামনের কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল শনিবার মগবাজার এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলনে বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন অলি আহমদ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেছেন, ‘হাল চাষের জন্য ন্যূনতম হলেও গরু দরকার হয়। ছাগল দিয়ে চাষ হয় না। আমরা তো দেখেছি গত ১০-২০ বছরে কী অর্জিত হয়েছে। সুতরাং এখন কী প্রয়োজন (জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে), সেটা আপনিও বোঝেন, আমরাও বুঝি। এখানে (সরকারবিরোধী) ৬২টি দল আছে, এর মধ্যে কয়টা দল রাস্তায় নেমে মিছিল করার মতো শক্তি রাখে, তা তো বুঝতে হবে। শুধু একটা নাম (দল) নিয়ে, ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাব, পেছনে স্ত্রীকে বা মেয়েকে নিয়ে দল চালাব, এরপর সরকারের সঙ্গে দালালি করব—এ ধরনের প্রোগ্রাম হলে তো সরকারের পতন হবে না।’
এ বিষয়ে বৈঠকে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে অলি আহমদ বলেন, বিএনপিকে যা পরামর্শ দেওয়ার, তা বৈঠকে দেওয়া হয়েছে। এটা সবার সামনে বলা সম্ভব না।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক বাম ধারার জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। জানা গেছে, তারা বিএনপির কাছে দুটি বিষয়ের নিশ্চয়তা চেয়েছে। ভবিষ্যতে আন্দোলন-কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াটা গণতান্ত্রিক করা। এর জন্য দুই পক্ষের লিয়াজোঁ কমিটিকে ক্ষমতায়ন ও শক্তিশালী করা।
বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো বড় আন্দোলনে সিদ্ধান্ত লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে না এলে এর পরিণতি কী হয়, সেটা আমরা বিগত আন্দোলনে দেখেছি। এ ধরনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ভুল হলে সেটা সংশোধনের সুযোগ এবং সময়—কোনোটিই থাকে না।’