জাতীয় সংসদ ভবন
জাতীয় সংসদ ভবন

বাজেট আলোচনা

কালোটাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনায় আওয়ামী লীগের দুই এমপিও

কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে রাখা হয়েছে, এর সমালোচনা করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুজন সংসদ সদস্য (এমপি)। তাঁরা হলেন প্রাণ গোপাল দত্ত ও জাহিদ মালেক।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সাধারণ করদাতাদের মধ্যে অনীহা দেখা দেবে। ৩০ লাখ টাকা আয়ে ৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু যিনি গত বছর টাকা দেখাননি (আয়কর বিবরণীতে), তিনি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করে নেবেন। এতে করে সঠিকভাবে যাঁরা কর দিয়ে আসছেন, তাঁরা কর দিতে অনিচ্ছা পোষণ করবেন।

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘ইনফরমাল গ্রে-মানি’ (অবৈধ পথে অর্জিত টাকা) নিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কিছু বলেননি। ‘গ্রে-মানি’ অপ্রদর্শিত আয়ের চেয়েও অনেক খারাপ। এটাকে সংকুচিত করতে হবে। না হলে অর্থ পাচার বন্ধ করা যাবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, সবচেয়ে ব্যয়বহুল হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা উপকরণের দাম আকাশচুম্বী। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভাষায়, শিক্ষা ও চিকিৎসা থাকা উচিত সরকারি খাতে। বেসরকারীকরণ করা হলে শিক্ষা ও চিকিৎসার গুণগত মানের পরিবর্তন হয় না, তখন সেটা হয়ে যায় একটা পণ্য। এখন পৃথিবীজুড়ে এটা পণ্য হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে যাঁর টাকা আছে, তিনি চিকিৎসা পাবেন, আর টাকা না থাকলে চিকিৎসা পাবেন না, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নিচে যাঁরা আছেন, তাঁদের দেখার কেউ নেই।

রাতে মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা যায় কি না, তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়ে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘কোনো একটা অ্যাপস সৃষ্টি করে রাত দশটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ারগুলো নিষ্ক্রিয় করা যায় কি না?

অথবা সেই মোবাইল টাওয়ার যাতে ফ্রিল্যান্সিং বা বিদেশি মুদ্রা অর্জনের বিকল্প পথ ছাড়া অন্যান্য কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। না হয় আমার রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, ১০ বছর থেকে শুরু করে সবার একটাই কথা কানে শোঁ শোঁ করে, ভোঁ ভোঁ করে। কানে শুনি না, লেখাপড়ায় মন দিতে পারি না। তাই এমন কোনো কিছু আবিষ্কার করা উচিত, যাতে করে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত আমাদের তরুণ প্রজন্ম এ প্রযুক্তি হতে দূরে থাকবে।’

বাজেট আলোচনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, তাঁরা কালোটাকা চান না। বিদেশে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে, এ টাকা ফেরত আনা গেলে ভালো হতো। কালোটাকা কমাতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে, কর কমাতে হবে। তিনি বলেন, হোয়াইটকলার (অভিজাত) লোকেরা কালোটাকা অর্জন করেন। কৃষক, শ্রমিকেরা এটা করেন না। তিনি কালোটাকার বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিদেশি চকলেট আমদানিতে কর কমানোরও সমালোচনা করেন জাহিদ মালেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর নাতি-নাতনিরা হয়তো বিদেশি চকলেট পছন্দ করেন, তাই ট্যাক্স (কর) কমাতে পারেন।’

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (জাতীয় পার্টি) নুরুন নাহার বেগম। তিনি বলেন, এ সুযোগ নিয়ে অনেক অপরাধী দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি দেশে কালোটাকা সাদা করতে পারবে।

কালোটাকা বাস্তবতা

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে কালোটাকা বাজারে আছে। এ টাকা কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে উপায় কেউ বাতলে দেয় না, সমালোচনা করে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, এতে নাকি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি (ফখরুল) বলেন না, তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়া মাত্র ৫ শতাংশ কর দিয়ে ১ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৭১০ টাকা সাদা করেছেন। এটা তাঁদের মনে থাকে না।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা সব নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ব্যবস্থার বিস্তারিত সংসদে তুলে ধরেন তিনি।

টাকা পাচার হচ্ছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন বাজেট আলোচনায় বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। কানাডার বেগমপাড়া, আবুধাবি, মালয়েশিয়ায় অনেকে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, টাকা পাচার, হুন্ডি ও বেটিং সাইট (বাজি ধরা ও জুয়া) যদি সরকার বন্ধ করে দিতে পারে, তাহলে ছয় মাস নয়, তিন মাসের মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। দেশে নামে-বেনামে অনেকগুলো বেটিং সাইট চলছে। এসবের মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে।