নির্বাচন কমিশন ‘সরকারের ইচ্ছা পূরণের যন্ত্রে’ পরিণত

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান ও এবি পার্টির মুজিবুর রহমান
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান ও এবি পার্টির মুজিবুর রহমান

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির নেতারা। দলগুলোর নেতারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছা পূরণের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সে কারণে তাঁদের বাদ দিয়ে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে দলগুলোকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়া কোনো দলের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। নিবন্ধনের জন্য এবার ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই–বাছাই শেষে আজ রোববার নির্বাচনের কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছা পূরণের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। তারা তাদের পছন্দমতো দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে। পছন্দ না হলে দিচ্ছে না।’ তিনি বলেছেন, যে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তারা কারা, কে কে আছেন, সে সম্পর্কে সবাই জানেন।

নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর নির্বাচন কমিশন থেকে নাগরিক ঐক্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয় উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে, আমরা পরীক্ষায় পাস করেছি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। এখন গণমাধ্যম থেকে দেখ দেখা যাচ্ছে, দুটি দলকে তারা নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দল এর মধ্য নেই। আমাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, তাঁরা এখন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করছেন। তাঁরা যেন রাজনীতিতে ভালোভাবে সক্রিয় থাকতে না পারেন, সে লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত না হওয়া গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রথম আলোক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে এর আগে আমাদের বলা হয়েছিল, তারা যাচাই বাছাই করে নিবন্ধনের যে তালিকা প্রাথমিকভাবে তৈরি করেছে, তাতে আমাদের দল এক নম্বরে ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অন্য দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। যে দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সরকারি এজেন্সি নিয়ন্ত্রিত দল। যেমন এক–এগারোর সময় গোয়েন্দা সংস্থা কিংস পার্টির নামে দল তৈরি করেছিল, এবারও সেই প্রক্রিয়া দেখা গেল।’

দলের সভাপতি নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে ৪০ মিনিট কথা হয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বলেছি, আমাদের দল প্রাথমিক তালিকায় এক নম্বরে থাকা সত্ত্বেও যেভাবে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাতেই প্রমাণিত হয়েছে এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের হাইকোর্টে যেতে বলেছেন।’

নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সাজানো নাটক বলেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি এজেন্সির নির্দেশ তারা এগুলো করছে।’

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সব শর্ত পূরণ করেই আবেদন করেছিলেন দাবি করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছিল সব ঠিক আছে। পরে নির্বাচন কমিশন যেভাবে টালবাহানা শুরু করেছিল, তাতে আমরা আগেই আঁচ পেয়েছিলাম একটা সাজানো ঘটনা ঘটবে। বাস্তবেও তাই দেখা গেলা। নির্বাচন কমিশন দলকানা সিদ্ধান্ত দিয়েছে।’