সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখি না

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে অভিমত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারুন-অর-রশিদ

হারুন–অর–রশিদ

বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি বিপরীত ধারায় বিভক্ত এবং সাংঘর্ষিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই বিভক্তির মূলে শুধু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়, আদর্শিক বিভাজনও রয়েছে। এ কারণে এই দুটি ধারার মধ্যে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদর্শিক বিষয় ছাড়াও বোঝাপড়া হতে পারে। কিন্তু বিএনপি এক দফার দাবি উত্থাপন করে, এক দফার আন্দোলনে চলে গিয়ে সেই পথ রুদ্ধ করেছে। বিএনপির এক দফা দাবি উত্থাপনের কারণে সরকার নমনীয় হয়ে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে, সেই সম্ভাবনা নেই। 

বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। এক. গণ-অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করা, যার সম্ভাবনা দেখছি না। এ কারণে এক দফা বাস্তবায়নেরও সম্ভাবনা নেই। দুই. নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তারা যে ৩১ দফা দিয়েছিল, সেটিকেই নির্বাচনী ইশতেহার করে জনগণের সামনে উত্থাপন করা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেটি অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহী হবে এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। 

বিএনপি যদি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহত করার নীতি গ্রহণ করে, তবে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে কমে যাবে। ২০১৪ সালের মতোই একটা পরিবেশে নির্বাচন হবে। 

এখন পরিস্থিতি যা আছে, তাতে মনে হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সরকার এখান থেকে ফিরে আসবে—এর কোনো কারণ দেখছি না। 

বিএনপির এক দফা দাবি উত্থাপনের আগে জনগণের মনোভাব বোঝা উচিত ছিল। অর্থাৎ জনগণ একটি গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে আছে কি না, সরকার পতনের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসবে কি না। কিন্তু তারা নেতাদের ওপর নির্ভর করে কতগুলো সমাবেশ ও জনসভা করে এক দফার আন্দোলনে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই আলোচনা বা সমঝোতার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। কাজেই সরকার ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুটি শিবিরের যে অবস্থান, সেটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংঘর্ষিক রূপ নিতে পারে।

আর বিএনপি যদি কোনো কারণে নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার তারা ভালো ফল করবে। আমার ধারণা, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। 


হারুন-অর-রশিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য