একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য আগে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে সৎ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চাই, রাষ্ট্রের নেতারা এমন হবেন, যাঁদের কথার সঙ্গে কাজের মিল হবে। যাঁরা কথার বোমা ফোটাবেন, আর কাজ হবে তার সম্পূর্ণ বিপরীত, এর নাম রাজনীতি নয়—এটি হচ্ছে চাণক্য নীতি। তাই দলের চরিত্র বদলানোর আগে ব্যক্তির চরিত্র বদলাতে হবে। চরিত্রবান সমষ্টি দিয়ে যে দল গঠন হবে, বিশ্বাস করা যায় তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে দলীয় এক আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির এ কথা বলেন।
দুর্নীতিকে সব অপকর্মের মূল ক্যানসার বলে মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, সমাজ থেকে এই মূলটাকে উপড়ে ফেলতে হবে। একজন প্রধানমন্ত্রী যদি চোর হয়, তার রাষ্ট্রের কর্মচারীও চোর হবে। একজন প্রেসিডেন্ট যদি চরিত্রহীন হয়, তাহলে রাষ্ট্রে চরিত্রহীনদের মেলা বসবে। এই জায়গাগুলো থেকে শুরু করতে হবে। জনগণ যাদের দেশ পরিচালনার ভার তুলে দেবে, তাদের অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে, সৎ হতে হবে।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদেরা ১০টা আঙুল যদি পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন, এই দেশে কারও পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব হবে না। এই জায়গা পরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে গোটা সমাজ পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এই জায়গাকে ডার্টি রেখে গোটা সমাজকে কখনো ক্লিন করা যাবে না। এটা অসম্ভব। পচে যাওয়া এই সমাজে আমরা দাবি করি না, এতে আমরা শতভাগ সৎ। তবে এই সংগ্রামে আমরা এক শ ভাগ আন্তরিক।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক পক্ষকে অনুরোধ করব যে আসুন জনগণকে ভালো কিছু বলার আগে নিজে ভালো হয়ে যাই। যদি নিজে ভালো হয়ে যাই, জনগণকে বেশি কিছু বলতে হবে না।’
জামায়াত দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জনগণের জানমাল আমাদের কাছে পবিত্র আমানত। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এসেছি। কিন্তু আমরা এ দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর আমাদের দুই দফা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বরাবরই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এসেছি। তারপরও আমাদের নিষিদ্ধ হতে হয়েছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, যাদের রাজনীতিতে সততা নেই, যাদের রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ, যাঁরা দেশপ্রেমের কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দেন, প্রতারণা করেন, তাঁরা দেশে স্বচ্ছ রাজনীতি পছন্দ করেন না। তাঁরা এই রাজনীতির কবর রচনা করতে চান। এ জন্যই দফায় দফায় তাদের এই প্রয়াস (নিষিদ্ধ)। তিনি বলেন, ‘আমাদের মুখে জীবনেও আপনারা কাউকে নির্মূলের স্লোগান শোনেননি এবং শুনবেন না। আমরা সবার মতপ্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের সকাল-বিকেল নাশতা করারও স্লোগান দেওয়া হয়। বনের পশুও তার সমগোত্রীয় পশুর সঙ্গে এমন আচরণ করে না। আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীকে বলতে চাই, সকল যন্ত্রণার কবর দিয়ে আসুন বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখি এবং নতুনভাবে গড়ি। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাচ্ছি, যে আকাঙ্ক্ষা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাই-জনতা লালন করেছেন।’
জামায়াতে আমির আরও বলেন, মূলত বৈষম্য ও অপশাসনের কবর রচনা করে দেশকে দুঃশাসনমুক্ত এবং আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা যুগপৎভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল। সংগ্রামী জনতা ফুলের পাপড়ি দিয়ে দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের বরণ করে নিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার জন্য আমরা যদি হাতে হাত রেখে কাজ করি, যেভাবে আমরা ৭ নভেম্বর এক ছিলাম। যেভাবে আমরা ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এক ছিলাম। জাতীয় স্বার্থে, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আগামী দিনগুলোতেও আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহস কেউ করবে না। আর যদি বিভক্ত হই, তাহলে আমাদের কপালে হয়তো বড় কোনো বিপদ অপেক্ষা করছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ফখরুদ্দীন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত ও আহসান হাবিব ও মহানগর উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার।