আমাদের হাঁটু যে ভাঙা নয় টের পাচ্ছেন, আপনাদের কোমর ভেঙে গেছে: কাদেরকে ফখরুল

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির ‘হাঁটু ভাঙেনি’, বরং আওয়ামী লীগের ‘কোমর ভেঙে’ গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ এখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি, বন্দুক ও টিয়ার গ্যাস দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। আগের দিন এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘হাঁটুভাঙা বিএনপি এখন লাঠির ওপর ভর করেছে।’

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কালকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে বিএনপির নাকি হাঁটু ভাঙা। আমাদের হাঁটু যে ভাঙা নয়, টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নিইনি, আপনাদের ইতিমধ্যে কোমর ভেঙে গেছে। সে জন্য আপনারা শুধু লাঠি নয়, ইতিমধ্যে রামদা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর হাঁটছেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জনগণের সঙ্গে নেই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সে জন্যই আজকে আপনাদের সম্পূর্ণভাবে এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা সন্ত্রাসী দল। তাদের জন্মই হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে—এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘একদিকে তারা বলে যে আমার সোনার ছেলেদের হাতে আমি কলম তুলে দিয়েছি। অথচ এই সোনার ছেলেদের হাতে বন্দুক, পিস্তল, লাঠিসোঁটা—এগুলো দিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আজকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা নয়, ইডেন কলেজে নিজেরা মারামারি করে চুলোচুলি করে একটা ভয়ংকর ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি নিয়ে তালা ঝুলিয়েছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় আর বাকি আছে?’

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবারের আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার দমননীতি নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, গত ২২ আগস্ট থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনের শুরুতেই তারা ভোলায় ছাত্রদলের নুরে আলম, আবদুর রহিমকে হত্যা করেছে, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওনকে হত্যা করেছে। যখন মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে, তখন তারা এটাকে দমন করার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে।’

মুন্সিগঞ্জের শাওন হত্যার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী নিদারুণ মিথ্যাচার তাদের যে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, ইটের আঘাতে শাওন মারা গেছে। কিন্তু শাওনের ডেথ সার্টিফিকেটে ডাক্তারেরা পরিষ্কার করে বলেছেন যে ম্যাসিভ হেড ইনজুরি ডিউ টু গান শট।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মিথ্যাচার আজকে করবে না কেন, প্রধানমন্ত্রী তো বিদেশে গিয়ে সমানে মিথ্যাচার করছেন। বিবিসিকে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলেই সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, মানুষ ভোট দিতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন তাঁরা। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর এই কথায় হাসছে।’

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এদের অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব একটাই—এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। ইনশা আল্লাহ, জনগণের বিজয় হবে।

একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়ুন, উল্টাপাল্টা কথা না বলে পদত্যাগ করুন। সেফ এক্সিট নিন এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের সরকার গঠন করব। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ছাত্ররা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে গেছে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে। আর সেখানে তাদের আপ্যায়ন করা হয়েছে লাঠির মাধ্যমে। এমনভাবে ছেলেদের পিটাইছে, সাপকেও মানুষ এভাবে পিটায় না। আমি নিন্দা জানাচ্ছি ওই ভিসির প্রতি। তিনি সান্ত্বনা দিতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একই সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, লাঠিখেলা চলবে না। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বললেন, লাঠি নিয়ে মিছিলে যাওয়া যাবে না। আমরা লাঠি নিয়ে কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাই না, যেতেও চাই না। কিন্তু আপনারা ঘোষণা দেবেন লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না। অন্যদিকে লাঠি দিয়ে পিটাবেন, এটা তো ভালো কথা হলো না।’

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পুরানা পল্টনে লগি-বইঠা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা লাঠিমিছিল করি না, লাঠিখেলা খেলি না—ওটা আপনারা করেন। লাঠিপেটা করে কীভাবে মানুষ হত্যা করতে হয়, এটা আপনারা দেখিয়েছেন, এক-এগারোর সময়। আপনারা এক-এগারোর পূর্ববর্তী মিছিলে যে নারকীয় তাণ্ডব ঘটিয়েছেন, তা কখনোই দেশের মানুষ ভুলবে না।’

পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির সমালোচনা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আজকে একজন বিদায়ী আইজিপিকে নিয়ে একটা সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। তাঁর রিটায়ারমেন্ট হয়ে গেছে, তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

রিজভী বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, এই আইজিপিকে কেন নিরাপত্তা দেবেন? কিসের জন্য নিরাপত্তা দেবেন? আপনি তাঁকে দিয়ে কী অন্যায় করিয়েছেন, কী অবিচার করিয়েছেন যে রিটায়ার করার পরেও তাঁর নিরাপত্তা দেবেন। এর আগের কোনো আইজিপিকে তো নিরাপত্তা দেননি, প্রটোকল দেননি—তাহলে রিটায়ার করার পরে তাঁকে কেন দিচ্ছেন? এগুলোর অর্থ, এগুলোর বিশদ জানা যাবে। কারণ, গুমের শিকার অনেক পরিবারের কান্না, অনেক ক্রসফায়ারের কান্না এর মধ্যে নিহিত আছে।’

সেদিন ছাত্রদল নেতাদের খালি হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘ওই দিন আপনাদের লাঠি হাতে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ, ওরা লাঠি ছাড়া ঠিক হবে না। আমরা লাঠি চাই না, কিন্তু মিরপুরের পল্লবীর সমাবেশ পণ্ড করে দিল, তখন তো আপনারা লাঠি থামাননি।’

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফজলুল হক, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী, সুলতান সালাহউদ্দিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ প্রমুখ।