সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধান আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অবসর নেওয়ার পরও আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু বাহিনী দুটি তাদের সাবেক প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কি না—এ প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন, ফলে বাহিনী নিজে থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে মনে করেন সাবেক তিনজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। পুলিশ বাহিনীতেও সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা নিজেদের ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন।
আজিজ-বেনজীর সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী
সাংবাদিকদের সঙ্গে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তখন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিষয়ও আসে।
অর্থমন্ত্রী নিজেই হঠাৎ বলেন, ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে।’ এ বাক্য শেষ করার পর চুপ থাকলে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘পারবেন? ঋণখেলাপিরা তো অনেক শক্তিশালী।’ তখন তিনি বলেন, ‘দেখা যাক পারি কি না। আপনারা দেখছেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের (বেনজীর আহমেদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কি ক্ষমতা কম ছিল?’ সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে সরকারের সমর্থন আছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ২০ মে মধ্যরাতের পর বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। সাংবাদিকেরা এ তথ্য জানালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধানও ধরা পড়েছেন; যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিষয়টি তো জনসমক্ষে চলে এসেছে।’
কিন্তু বাহিনী দুটি তাদের সাবেক প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কি না—এ প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন, ফলে বাহিনী নিজে থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে মনে করেন সাবেক তিনজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। পুলিশ বাহিনীতেও সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা নিজেদের ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন।
সাংবাদিকেরা তখন বলেন, সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে সরকার তো কিছু করেনি। অর্থমন্ত্রী জবাবে বলেন, সরকার কিছু করেনি মানে সেনাবাহিনী কিছু করবে।
আজিজ আহমেদ তো এখন সেনাবাহিনীতে নেই—বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবসরে যাওয়ার পরও সেনাবাহিনী কিছু করতে পারে।
সেনাবাহিনী কি ব্যবস্থা নিতে পারে?
সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনী নিজে থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কারণ, জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন, তাঁর অধীন ছিল বাহিনী। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে না। মইনুল ইসলাম উল্লেখ করেন, সাবেক এই সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর আরও দুজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলে তখন সেনাবাহিনী সহায়তা করতে পারবে।
উনি তো (বেনজীর আহমেদ) চাকরিতে নেই। যিনি চাকরিতে থাকেন, তিনিই কেবল শৃঙ্খলাবিধির আওতায় থাকেন। যিনি চাকরিতে থাকেন না, সরকারি টাকা নেন না, সোজা কথায়—যিনি প্রজাতন্ত্রের বেতনভোগী কর্মকর্তা নন, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিধিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এখন যেখানে ফৌজদারি আইনের বরখেলাপ হয়েছে, সেখানে ফৌজদারি আইনের প্রয়োগ করার সুযোগ আছে।পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা
পুলিশেও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বেনজীর আহমেদ এখন পুলিশ বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা নন। যদি তিনি পুলিশের চাকরিতে থাকতেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যেখানে ফৌজদারি আইনের প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে পুলিশের অভ্যন্তরীণ কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি তো (বেনজীর আহমেদ) চাকরিতে নেই। যিনি চাকরিতে থাকেন, তিনিই কেবল শৃঙ্খলাবিধির আওতায় থাকেন। যিনি চাকরিতে থাকেন না, সরকারি টাকা নেন না, সোজা কথায়—যিনি প্রজাতন্ত্রের বেতনভোগী কর্মকর্তা নন, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবিধিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এখন যেখানে ফৌজদারি আইনের বরখেলাপ হয়েছে, সেখানে ফৌজদারি আইনের প্রয়োগ করার সুযোগ আছে।’