ইইউ প্রতিনিধিদলকে যা জানাল বিএনপি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপি নেতারা। শনিবার সকালে ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সরকারের অধীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না, এমন দাবি করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সে জন্যই সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর নজর রাখছে।

ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন। তিনি জানান, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাঁদের দাবিসহ সার্বিক বিষয় তাঁরা ইইউ প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেছেন।

ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ইইউর ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠকটি শুরু হয় আজ শনিবার সকাল ৯টায়, চলে প্রায় এক ঘণ্টা।

সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। এখানে মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সংলাপের জন্য তো একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ লাগে।
আমীর খসরু মাহমুদ আরও বলেন, সংলাপ গণতান্ত্রিক পরিবেশের একটি অংশ।

বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সেই পরিবেশ প্রথমে তৈরি করতে হবে। তারপরই সংলাপের প্রশ্ন আসবে।

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ও আসাদুজ্জামান এবং সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি সারা বিশ্বের কেন এত নজর, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন। কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এখানে এসে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত দিতে হচ্ছে? দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে তো তাদের যেতে হচ্ছে না। কেন বাংলাদেশে আসতে হচ্ছে?

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়, সে কারণেই সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর নজর রাখছে।’

আমীর খসরু মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ইইউ জানতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন আদৌ জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি না। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি, এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভব নয়। কারণ অনেক। এ কারণগুলো বলে শেষ করা যাবে না। মূল কারণগুলো হচ্ছে এদের অধীন নির্বাচন হবে না। কারণ নির্বাচনের দিন তো দূরে থাক। ভোট চুরি তো এখনই চলছে।

এই যে ডিসি পোস্টিং হচ্ছে, পুলিশের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার চলছে, বিএনপির জনসভায় বাধা দিচ্ছে, গতকালের পদযাত্রায় আক্রমণ করেছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে।’

আমীর খসরু মাহমুদ আরও বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিচার করে তাড়াতাড়ি সাজার ব্যবস্থা করছে, তারা যাতে নির্বাচন করতে না পারেন। এসব কাজ তারা প্রতিদিন করছে ভোট চুরির জন্য। কারণ, তারা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে জোর করে আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। স্বাভাবিকভাবে এ কথাগুলো আজকের আলোচনায় এসেছে। শেষ কথা হচ্ছে, এই সরকারের অধীন দেশের মানুষ তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ পাঠাবে কি পাঠাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। কথা হচ্ছে, নির্বাচন তো হতে হবে। পর্যবেক্ষক আসার প্রশ্ন তখনই আসে, যখন একটি নির্বাচন হয়। এ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশ্বাস করে না, জনগণ বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়ে সরকার গঠন করেছে। ভবিষ্যতেও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এই প্রেক্ষাপটে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা এখানে আসার উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার করছে, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন যদি হতো, তাহলে তারা তো নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত—কোথাও যাচ্ছে না। কেন বাংলাদেশে আসছে, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বাংলাদেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, সেটার লক্ষণ প্রতিদিনই আমরা দেখছি। জেল, মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা প্রতিনিয়ত চলছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। তাদের এ সফরকে বিএনপি কীভাবে মূল্যায়ন করে, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ সফর কেন হচ্ছে, এটাই তো প্রশ্ন। কেন বাংলাদেশে সফর করছে সবাই? তারা যখন বক্তব্য শুরু করে প্রথম কথাটা তাদের কী, এ দেশে তারা একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এখান থেকে আপনারা ধরে নেন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের কী ধারণা এবং তারা কী চায় বাংলাদেশে। কূটনৈতিক ভাষায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলার আছে?’