দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) গুলশানে আলিশান কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করে। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থী বাছাইয়ের সময় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নতুন নিবন্ধিত দলটির ৫৩ প্রার্থীর কেউ জিততে পারেননি। একজন বাদে বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতেও।
প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের বিএনএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন সুনসান নীরবতা। দিনের অনেকটা সময় কার্যালয় তালাবদ্ধই থাকে। নেতা-কর্মীরা খুব একটা আসেন না। একজন অফিস সহকারী দেখভাল করেন। তবে কোনো সভা থাকলে মাঝেমধ্যে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা আসেন।
বিএনএমের নেতা ও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া চার নেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নিবন্ধন পাওয়া তাঁদের দলের সাংগঠনিক ভিত্তি একেবারেই দুর্বল। দলটির তেমন কোনো নেতা-কর্মী নেই। ফলে ঢাকায় এত বড় কার্যালয় নিলেও সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম করার মতো লোকবল থাকে না। আর দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, এটি নিয়েও নেতা-কর্মীরা সন্দিহান।
কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, মুখ্য সমন্বয়কসহ সবার কক্ষই খালি। নেতা-কর্মী কেউ আসেননি।
গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশান-২ নম্বরে বিএনএমের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কলাপসিবল গেট তালা দেওয়া। তবে ভেতরে আলো জ্বলছে। পাশের দোকানের এক ব্যক্তি জানান, ভেতরে লোক থাকতে পারে। পরে দলটির অফিস সহকারী সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তালা খুলে দেন।
কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, মুখ্য সমন্বয়কসহ সবার কক্ষই খালি। নেতা-কর্মী কেউ আসেননি। অফিস সহকারী জানান, নির্বাচনের পর সেভাবে কর্মী বলতে কেউ আসেন না। সভা থাকলে নেতারা মাঝেমধ্যে আসেন।
বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পর দলের ওয়ার্কিং কমিটির একটি সভা হয়েছে। নির্বাচনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। দলকে নতুন করে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন দল বলে বিএনএমের প্রার্থীরা মাঠে সেভাবে কুলিয়ে উঠতে পারেননি।
দলটির কার্যালয় ছিল মহাখালীর একটি ছোট কক্ষে। ৩৮০ বর্গফুটের সেই কার্যালয়ের ভাড়া ছিল মাসে ১৫ হাজার টাকা। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গুলশানের কার্যালয়টি নেয় বিএনএম। এই কার্যালয় রাখা না–রাখা নিয়েও দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কার্যালয়টির প্রাথমিক চুক্তি রয়েছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর এটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।
দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনের পরের আলোচনায় দলকে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।বিএনএমের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এস এম আজমল হোসেন
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর বলেন, এই কার্যালয় রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব এলাকায় রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বেশি, সেখানে দলের কার্যালয় করার প্রস্তাব এসেছে। কিছুদিনের মধ্যে দলের কার্যালয়ের ভবিষ্যৎ বোঝা যাবে।
নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। সরকারি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় দলটি গঠিত হয় বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকে দলটির প্রার্থী হতে পারেন এমন আলোচনাও ছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত সাড়া ফেলার মতো কিছু ঘটাতে পারেনি তারা। ক্ষমতাসীন দলের কাছেও গুরুত্ব কমে যায় দলটির।
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বিএনএম প্রধান বিরোধী দল হবে, এমন আশার কথা শুনিয়েছিলেন দলটির নেতারা। শেষ পর্যন্ত দলটি ৫৩ আসনে প্রার্থী দিতে পারে। কক্সবাজার-২ আসনে দলটির প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ বাদশা শুধু জামানত রক্ষা করতে পারেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ বাকি সব প্রার্থী জামানত হারান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনএমের একাধিক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই দলের সঙ্গে নানা দুর্নাম যুক্ত হয়ে যায়। নির্বাচনের আগে আগে অন্তর্কোন্দলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বেও বদল আসে।
প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের নামে বিভিন্ন উৎস থেকে চাঁদা আদায় হয়েছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দল থেকে প্রার্থীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। এই দলের আদৌ কোনো ভবিষ্যৎ রয়েছে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিএনএমের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এস এম আজমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনের পরের আলোচনায় দলকে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।