সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এবং নিজেও সতর্ক থাকবেন উল্লেখ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরেরা দেশে–বিদেশে ও প্রশাসনে এখনো সক্রিয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন তারেক রহমান। ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে বিএনপি। শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল শত্রু–মিত্র চেনার দিন। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল বাংলদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না।
তারেক রহমান বলেন, রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল দেশের স্বার্থ রক্ষার মিছিল। নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল। নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার রক্ষার মিছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেন আর কখনোই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি নাগরিক সরাসরি ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সক্ষমতা অর্জন করলেই তা সম্ভব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জনগণের ভোটের প্রতি মুখাপেক্ষী না করা পর্যন্ত মানুষ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, যদি মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে না পারি।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হাসিনা পালালেও তাঁর দোসরেরা অনেকে এখনো আছে। তারা আবার বাংলাদেশকে আক্রমণ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সজাগ, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থেকে যেকোনো চেষ্টা নস্যাৎ করে দেব।’
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্বে মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ নিহত হয়েছে, অনেক মানুষ গুম হয়েছে, অনেক নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বশেষে ছাত্র–জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই অভ্যুত্থানে হাসিনা পালিয়েছেন।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ কর্মসূচিতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অংশ নিয়েছেন।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নয়াপল্টন থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড়ে যায়। সেখান থেকে হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আসে শোভাযাত্রা। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার সময়ও কারওয়ান বাজার মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিকে মিছিল যেতে দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ৭ নভেম্বর। দিনটিকে বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রথম বড় পরিসরে শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এর আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৭ নভেম্বরের শোভাযাত্রা কর্মসূচি বিএনপিকে নানা শর্ত সাপেক্ষে সংক্ষিপ্তভাবে করতে হতো।
এদিকে বিএনপির শোভাযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও দুপুর থেকেই রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। বেলা পৌনে দুইটার দিকে কারওয়ান বাজার মোড় থেকে বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকায় দুপুরের পর থেকেই ছিল তীব্র যানজট। এতে মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শোভাযাত্রা বের হওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড় হয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও বিজয়নগর এলাকায় ছিল একই অবস্থা।