ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আজ, দুই পদে প্রার্থী ২৪৫ জন

ছাত্রলীগ লোগো
ছাত্রলীগ লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন আজ শনিবার। প্রায় সাড়ে তিন বছর বিলম্বে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগের এ ইউনিটের শীর্ষ নেতা হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৪৫ জন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন জোর আলোচনা—কারা আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে?

আজ বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন হয়েছিল।

পরে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ওই বছরের ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) দুই পদে সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেনের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি ওই কমিটি ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে চার বছর পার করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক চর্চায় মর্যাদার দিক থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির পরই এ ইউনিটের অবস্থান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মধুর ক্যানটিন অবস্থিত।

যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই দেশের প্রায় সব ছাত্রসংগঠন পরিচালিত হয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গুরুত্ব অন্য যেকোনো ইউনিটের চেয়ে বেশি। ফলে এ ইউনিটের সম্মেলন নিয়েও নেতা-কর্মী ও রাজনীতিসচেতন মহলের আলাদা আগ্রহ আছে।

গত তিন সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে শীর্ষ নেতা নির্বাচিত বা মনোনীত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজনকে (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী, গোলাম রাব্বানী, সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেন) চূড়ান্ত করার পর জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী দুজনকে কেন্দ্রে ও দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থাৎ, অনেকেই একইসঙ্গে কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রার্থী। এবারও একই প্রক্রিয়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতে পারে বলে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২৪৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নেওয়া হয়। মনোনয়নপত্র দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই পদের জন্য ২৪৫ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। ২৪৫ জনের মধ্যে অন্তত ১০০ জন একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরও শীর্ষ পদের প্রার্থী বলে একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন।

আলোচনা বয়স নিয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল। ওই সম্মেলনের পর ৩১ জুলাই এই ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে সনজিত ও সাদ্দামের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এর আগে ২০১৫ সালের ১১ জুন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এর সপ্তাহখানেক পর ঘোষিত কমিটিতে আবিদ আল হাসান সভাপতি ও মোতাহার হোসেন সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগে ২০১১ সালের ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মেহেদী হাসান মোল্লা সভাপতি ও ওমর শরীফ সাধারণ সম্পাদক হন। তারও আগে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে সোহেল রানাকে সভাপতি ও সাজ্জাদ সাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গত চারটি সম্মেলনের সময় পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবারই তিন থেকে চার বছর বিলম্বে এ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটগুলোর মেয়াদ এক বছর এবং ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে হলে ছাত্রত্বের বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি ২৭ বছর বয়সসীমার মধ্যে থাকতে হয়।

২০১৮ সালে তা ২৮ বছর (২৮ বছর ৩৬৪ দিন) করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রতিবারই তিন-চার বছর বিলম্বে সম্মেলন হওয়ায় রাজনীতিতে একধরনের জট তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি করেও শুধু বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী দুটি পক্ষ বয়সের বিষয়টি নিয়ে দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। বয়স ২৮ বছরের মধ্যে থাকা অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ পক্ষটি বলছে, বয়সসীমা ২৮ বছরই থাকা উচিত। তা না হলে ছাত্রলীগ অছাত্রদের সংগঠনে পরিণত হবে, যা একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে পদপ্রত্যাশী অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ পক্ষটি বলছে, আগের সম্মেলনগুলো যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হলে তাঁরাও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেতেন।

কিন্তু যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় তাঁদের অনেকের বয়স ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে। তাই সর্বশেষ সম্মেলন থেকে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে যাঁদের বয়স ২৮ বছরের মধ্যে ছিল, তাঁদেরও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। দীর্ঘদিন রাজপথে শ্রম-ঘাম-ত্যাগের পর শুধু বয়সের কারণে কেউ নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা হারাবেন, এটা কাম্য নয়। তা ছাড়া অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব মনোনীত করতে হলে বয়সসীমা শিথিল করার বিকল্প নেই৷

নেতা হতে চান যাঁরা

গত ২১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কার্যালয়, দলীয় কার্যালয় ও বাসায়। তারিখ ঘোষণার পর প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বহু গুণে বেড়েছে। শেষ মুহূর্তেও চলছে জোর চেষ্টা-তদবির। ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যানটিনসহ রাজনৈতিক আড্ডাস্থলগুলোতে এখন অনেকের আলোচনার বিষয়—কোনো প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হবে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব, কারা আসছেন নেতৃত্বে?

গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের ভিড়। নিয়মিত সালাম ও নিজেদের পরিচয় দিয়ে নেতাদের তুষ্ট করার চেষ্টা করেন প্রার্থীরা। মহানগরের সাবেক কিছু নেতা এবং নিজেদের এলাকার (গ্রামের বাড়ি) প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও নিয়মিত ধরনা দিয়েছেন প্রার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রার্থীদের অনুসারীরা তাঁদের ব্যাপারে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এবার কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ও কারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসবেন, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে নেতা-কর্মীদের অনেকের ধারণা, প্রার্থীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদন (প্রার্থীর ভাবমূর্তি, সাংগঠনিক অবস্থান ও দক্ষতা এবং পারিবারিক রাজনৈতিক মতাদর্শ), বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর ও বড় নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশ—তিনটি বিবেচনায় সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতা ঠিক করবেন।

কোন হলে কে আলোচনায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সংগঠনের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, জগন্নাথ হল শাখার সভাপতি কাজল দাস ও সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার সভাপতি শহিদুল হক শিশির, কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার সভাপতি সুমন খলিফা, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান, বিজয় একাত্তর হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু ইউনূস, স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সভাপতি তানভীর সিকদার এবং ওই হল সংসদের সাবেক ভিপি এম এম কামাল উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেশকাত হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী।

একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রার্থী হিসেবে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরিদা পারভীন, সাহিত্যবিষয়ক উপসম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বী, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রওনক জাহান রাইন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজালাল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানবীর হাসান সৈকত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল সংসদের সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক উপসম্পাদক ইরফানুল হাই সৌরভ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক শেখ সাঈদ আনোয়ার সিজার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজী ও সাকের আহমেদ আলামিন এবং গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত।