তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘পিস অ্যাম্বাসেডর জাতীয় সম্মেলনে’ বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ জুন
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘পিস অ্যাম্বাসেডর জাতীয় সম্মেলনে’ বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ জুন

যে দেশের শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তারা আমাদের নসিহত করছে

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ‘সেখানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বিতর্কের আগে করমর্দন করল না, কেউ কারও দিকে তাকায় না। সেখানে তো শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নোংরা ভাষায় আক্রমণ করছে। আর সেই দেশ আমাদের লেকচার দেয়, নসিহত করে এই করতে হবে, ওই করতে হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘পিস অ্যাম্বাসেডর জাতীয় সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব কথা বলেন। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে ইউএসএআইডির সহযোগিতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও আইএফআইএসের অংশীদারত্বের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ৯৮টি উপজেলায় স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব নিরসন, সংঘাত-সহিংসতা রোধ ও শান্তি-সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে কাজ করছে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট। ঢাকায় এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো রক্তের ইতিহাস আছে। দ্বন্দ্ব সূত্রপাত ঘটার অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু যারা এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে ইউএসএআইডি ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এসব প্রতিষ্ঠান যে দেশের (আমেরিকা) সেখানকার কী অবস্থা। বদিউল আলম মজুমদারকে মনে হয় ওই দেশে গিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।’

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘সেখানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বিতর্কের আগে করমর্দন করল না, কেউ কারও দিকে তাকায় না। সেখানে তো শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের তো রক্তের ইতিহাস নাই। তাহলে মুখ দেখাদেখি হয় না কেন? দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নোংরা ভাষায় আক্রমণ করছে। আর আমাদের লেকচার দেয়, নসিহত করে এই করতে হবে, ওই করতে হবে।’

মতবিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার পরও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা সহনশীল বলে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দিনে এসব সমস্যা সমাধান করে আমরা নজির স্থাপন করব।’  

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, স্বাধীনতার পর দুই রাজনৈতিক নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের সমাজকে তীক্ষ্ণ ও শাণিতভাবে দ্বিখণ্ডিত করে রেখেছে। এই বিভক্ত সমাজকে একতাবদ্ধ করতে হলে দুই পক্ষকেই কিছু ছাড় দিতে হবে। ক্ষমতা এক হাতে কেন্দ্রীভূত হলে বৈষম্য বাড়বেই। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রাজনৈতিক বৈষম্য চলছে। দিন দিন বিভক্তি আরও বেড়েছে। রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক বিদ্যমান থাকতে হবে।

বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বেশি সংকটে উল্লেখ করে আবদুল আউয়াল বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একটা ভালো না থাকলে আরেকটা ভালো থাকে না। অর্থনীতি খারাপ হওয়ার জন্য রাজনীতিবিদেরা বেশি দায়ী। রাজনীতি ঠিক করতে না পারলে অর্থনীতি ঠিক করতে পারব না। অর্থনীতিকে ঠিক করতে হলে ও বৈষম্য কমাতে হলে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা কমাতে হবে।      

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বর্তমান রাজনীতি লুটপাটের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব লুটপাটের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে। আর্থসামাজিক কাঠামো পরিবর্তন না করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে বৈষম্য নির্মূল করতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি এমন একটি তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, উন্নয়নের শর্ত দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এর মানে বলছে, সরকারের ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ বারবার দরকার আওয়ামী লীগের সরকার। সেভাবেই সব রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। তিনি এবারের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, এই বাজেটে বড়লোকের স্যাটেলাইট, গরিবের হালুয়া টাইট।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে যেন নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতিতে মেতে উঠেছি। যে জাতি পরস্পরকে ঘৃণা করে ও একে অপরকে ল্যাং মারতে চায়, তারা বেশি দূর এগোতে পারে না। মতের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকতে হবে। শান্তি-সম্প্রীতি না থাকলে সমাজ টিকে থাকবে না।