১৪-দলীয় জোটের শরিকদের যে সাতটি আসন দেওয়া হয়েছে, এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শরিকদের অসন্তোষ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৪ দলের শরিকদের আরও দল আছে। ১৪ দল তো এক দল আর দুই দল না। তাদের তো বোঝাতে হবে। যে আমরা মানছি না। নেতৃস্থানীয় যারা তাদের কথা সুর যা হওয়া উচিত, সেটাই হচ্ছে। যা হওয়ার হয়েছে। এর বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
আজ শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।
শরিক ও মিত্রদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাঁদের সবার এবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তাঁরা যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অংশ নিতে পারবেন। কারও ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। জাতীয় পার্টি তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে। ১৪ দলের কাউকে কাউকে নৌকা মার্কা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি ১৪ দলের সমন্বয়ককে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন তারা সবাই করুক, তাদের দলের প্রতীক নিয়ে। সাতটা নির্বাচন এলাকায় আমরা নৌকা ছাড় দিতে পারব।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকের প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ–আলোচনা চলছে। সবাই শুধু বিভিন্ন দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলেন। এই সময়টাকে আমাদের এই অ্যলাইয়েন্সটাকে আমরা যতটা রাজনৈতিক মূল্য দিচ্ছি, সেখানে আসনের ব্যাপারটা কম। মুখ্য হচ্ছে রাজনীতি।একটা সমঝোতা, একটা রাজনীতি। আজকে সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের নির্বাচন। বাংলাদেশের মাটি থেকে এই উপ শক্তিকে আমাদের পরাজিত করতে হবে। নির্বাচন আসেনি তারা নাশকতা করছে। নাশকতা জনগণ সমর্থন করে না। এই নাশকতা বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করেছে। আরও জনবিচ্ছিন্ন হবে। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তারা আন্দোলন জমাতে পারে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে না দেওয়ার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, প্রতিযোগিতা হবে। স্বতন্ত্র নির্বাচনে জিতলে জিতবে। আমরা জোর করে কারও বিজয় ছিনিয়ে আনব না।’
কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারবেন না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমারও বিজয়ের গ্যারান্টি নেই। আমাকেও চারজনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ জিতে যায়, আমাদের মানতে হবে। এখানে হার-জিতের প্রশ্ন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সন্ত্রাস-সহিংসতার পাশাপাশি গুজব ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘যার মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন বলে দাবি করেন, যারা মানবাধিকারের প্রবক্তা, যেমন টিআইবি। এখনো ২৮টি দল নির্বাচন অংশ নিচ্ছে, তারপরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেন হবে না, এ প্রশ্নের উত্তর টিআইবির কাছে পাওয়া যাবে না। তারা জেনেশুনেই এটা করছে। বিএনপির ভাবার্দশ, মতাদর্শ, প্রবক্তা হয়ে তারা চোখ থাকতে অন্ধ। এমন একটা ভূমিকায় তারা অবতীর্ণ হয়েছে।’
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে কি বোঝায়, টিইআবির প্রতি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, এর অর্থটা কী? টিআইবি বিএনপির শাখা সংগঠন। তারা একই সুরে কথা বলে।
বিএনপি নেতা মঈন খান ভাগাভাগির নির্বাচন হচ্ছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, এর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিসের ভাগাভাগি? বানরের পিঠা ভাগ নাকি হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে রেকর্ড দেখাতে চাই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ। কাজেই নির্বাচনব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করার ক্ষেত্রে আমাদেরও দায়িত্ব আছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে দেখব কারা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করে, নির্বাচনী কাজের বাধা দেয়। আর নাশকতার ব্যাপারে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। তারপরও চোরাগোপ্তা যে কর্মকাণ্ড, নাশকতা, এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে করার সুযোগ আছে। এগুলো করতে হাজার হাজার লোকের দরকার হয় না। চোরাগোপ্তা হামলা কিছু লোক করতে পারে। অনেক সময় ধরা পড়ছে, ধরা পড়ছে না। এসব কাজ একটা মহল করছে।’
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন বিরোধী অপকর্ম ও নাশকতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, তারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্রের মহড়া দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি তারা অস্ত্র জোগাড় করছে। নির্বাচনে হামলা করার জন্য তারা অস্ত্র ব্যবহার করবে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপির অস্ত্র সংগ্রহের খবর গোয়েন্দাদের কাছেও আছে। অস্ত্র সংগ্রহ করা এখন কোনো কঠিন ব্যাপার না। আজকে অস্ত্রের ব্যবসা সারা দুনিয়াতে আছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তাদের কর্মসূচি শুরু হবে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে। ১৭ ডিসেম্বর আলোচনা সভা। ১৮ডিসেম্বর বিজয় শোভাযাত্রা করা হবে। ওই দিন ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে বিজয় শোভাযাত্রা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সহদপ্তর সম্পাদক সায়েম হক প্রমুখ।