গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন, গণ অধিকার পরিষদ বেরিয়ে গেল

গণ অধিকার পরিষদ
গণ অধিকার পরিষদ

সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সাত দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আর কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। তবে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে থাকছে গণ অধিকার পরিষদ। যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দলটি অন্যান্য দলের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো জোটের বাইরে থেকে এককভাবে পালন করবে।

আজ শনিবার গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক (নুর) সভাপতিত্ব করেন।

দলটির সেই সভা থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করা হবে। এখন থেকে শুধু ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’–এর সঙ্গে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না গণ অধিকার পরিষদ। নিজস্ব উদ্যোগে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে সব দলের সঙ্গে রাজপথে সমন্বিত কর্মসূচি পালন করবে গণ অধিকার পরিষদ।

এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের টানাপোড়েন চলছিল। শুধু গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে না থেকে যুগপৎ আন্দোলনের সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন করবে গণ অধিকার পরিষদ। এককভাবে কর্মসূচি পালন করার সক্ষমতা গণ অধিকার পরিষদের রয়েছে। তাই দলের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এখন থেকে নিজেদের দলের শক্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত বছরের ৮ আগস্ট সাতটি দল ও সংগঠন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এসব কর্মসূচি ও নেতৃত্বের বিরোধে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মনোমালিন্য নিয়ে আলোচনা হয়। জোটে ভাঙনের শঙ্কাও ছিল। গণ অধিকার পরিষদের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সে শঙ্কা সত্যি হলো।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের টানাপোড়েন চলছিল। কোনো সংগঠন যদি মনে করে তারা মঞ্চে থাকবে না, সে অধিকার তাদের রয়েছে। তবে সরকার বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে বিভক্তির যে চেষ্টা চালাচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদের সিদ্ধান্ত সেটাকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, গণ অধিকার পরিষদের এ সিদ্ধান্ত মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ সময়ে সরকারবিরোধীদের দৃঢ় ঐক্য দরকার ছিল। গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণ অধিকার পরিষদের বেরিয়ে যাওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন হাসনাত কাইয়ুম।

গণ অধিকার পরিষদ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দল।

নুরুল হক নুর

এখন গণ অধিকার পরিষদ এ জোট থেকে বেরিয়ে গেল। আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন দলটির দপ্তর সমন্বয়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভোটারবিহীন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে প্রহসনের নির্বাচন জনগণকে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাস করা হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কর্মময় জীবন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ১৫ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁর কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত নেতারা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১২ মে বেলা সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।