বিএনপিকে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

ভোটের আগে বিএনপিকে আর উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ২৮ অক্টোবর শনিবারের সংঘাতের পর বিএনপি আবারও ঘুরে দাঁড়ালে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্নে করা যাবে না। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ—দুই দিক থেকেই কঠোরভাবে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ মনোভাব জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের গ্রেপ্তারের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তা তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত অব্যাহত রাখা হবে।

অন্যদিকে বিএনপি তিন দিনের অবরোধের যে কর্মসূচি দিয়েছে, এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ সারা দেশে ওই তিন দিনই ‘শান্তি মিছিল’ করবে এবং কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দলের সব কার্যালয়ে সতর্ক পাহারা থাকবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পাড়া–মহল্লায় ‘পাহারা’ জোরদার করবেন, যাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হরতাল-অবরোধ সফল করার জন্য নামতে না পারেন। আর প্রধানমন্ত্রী সময়-সুযোগমতো ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কিছু বড় সমাবেশ করবেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার, কর্মীদের ঘরে তোলা এবং দলে ভাঙন ধরাতে পারলে ভয় কেটে যাবে। তখন ভোটাররাও আশ্বস্ত হবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও রাজপথের চেয়ে ভোটের মাঠে বেশি সময় দিতে পারবেন।

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে সংঘাত ও পুলিশের মৃত্যুর ঘটনার পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু হয়। গতকাল রোববার দিনভর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তাঁরা মনে করছেন, বিএনপি আর রাজপথের শক্তি দেখাতে পারবে না। বিদেশি যেসব শক্তির ওপর বিএনপির ভরসা ছিল, তারা কী করে, সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে মধ্যম ও নিচু সারির নেতাদের মধ্যেও স্বস্তির ভাব দেখা যায়।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশ, এতে বিপুল মানুষের জমায়েত এবং ২৮ অক্টোবর কী হবে—এ ধরনের আতঙ্ক ছিল চারদিকে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও কখনো কখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা গেছে।

তারেকের কর্তৃত্ব কমানোর চেষ্টা

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, বিএনপির যে শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাঁদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ এতটা বিরূপ নয়। তাঁদের ক্ষোভ মূলত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। বিএনপির নেতাদের এটাই বোঝানো হবে যে তারেক রহমানের কথা শুনলে তাঁদের রাজনীতিতে ভবিষ্যৎ নেই। আর শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলে এবং গ্রেপ্তার–আতঙ্কে অন্যরা আড়ালে চলে গেলে কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়বেন। এর মাধ্যমে বিএনপিতে তারেক রহমানের কর্তৃত্ব খর্ব করতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রায় সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে দলটির রাজপথের নেতা-কর্মীরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিয়ন্ত্রণে। আর তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অনড়। তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে সরকারের পতন আন্দোলনে মরিয়া করে তুলেছেন মাঠের কর্মীদের। এ জন্য তারেকের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএনপির সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। রাজপথে আন্দোলন করে কিছুই হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি এর আগেও টানা অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারের কিছু করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনৈক্য, মতবিরোধ আছে। এই সুযোগে তাঁদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তারেক রহমান থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে দলের ভেতর থেকে একটা অংশ দলছুট হয়ে নির্বাচনে যাতে অংশ নেয়, এমন একটা চেষ্টাও রয়েছে ক্ষমতাসীনদের।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির গ্রেপ্তার নেতারা কখন ছাড়া পাবেন, তা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত, তাঁরা তারেক রহমানের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করলে দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাবেন। এর বাইরে দেশি-বিদেশি নানা তৎপরতার ওপরও নির্ভর করতে পারে। আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি থেকে কিছু নেতা ভাগিয়ে আনতে পারলে তাদের আন্দোলনের মিত্রদের মধ্যেও কেউ কেউ চলে আসতে পারে। ইসলামপন্থী যেসব দল এখনো ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে পাকা কথা দেয়নি, তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হবে।

আতঙ্ক দূর করাও লক্ষ্য

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশ, এতে বিপুল মানুষের জমায়েত এবং ২৮ অক্টোবর কী হবে—এ ধরনের আতঙ্ক ছিল চারদিকে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও কখনো কখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা গেছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপিকে মাঠছাড়া করে এই আতঙ্ক দূর করাই লক্ষ্য এখন আওয়ামী লীগের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের কারণে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল না। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি চাপা দেওয়া গেলে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বেশিসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে স্বস্তির পরিবেশ দরকার।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার, কর্মীদের ঘরে তোলা এবং দলে ভাঙন ধরাতে পারলে ভয় কেটে যাবে। তখন ভোটাররাও আশ্বস্ত হবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও রাজপথের চেয়ে ভোটের মাঠে বেশি সময় দিতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। আগামী ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন তিনি। ওই দিন আওয়ামী লীগ বড় সমাবেশ করবে। এরপর কক্সবাজারে রেললাইন উদ্বোধন উপলক্ষে এবং খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর সব কটিই হবে মানুষের ভয় দূর করে তাঁদের নির্বাচনমুখী করা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। রাজপথে আন্দোলন করে কিছুই হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি এর আগেও টানা অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারের কিছু করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াতে পারবে না।