‘দেশের মানুষ ইলেকশনের নামে সিলেকশন চায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আইনকানুন ঠিক আছে। কিন্তু ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
কয়েকজন আইনজীবীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে দলটির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনজীবী সুলতান আহমেদ খান ও শহীদুল ইসলাম মোল্লার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক আইনজীবী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
সরকারের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এক সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আসলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতে থাকে। তিনি বলেন, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের ইচ্ছার বাইরে চললে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে প্রতিনিধি পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
উন্নয়নের নামে মানুষের ওপর অত্যাচার ও দেশে লুটপাট চলছে—এমন অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন মানুষের উন্নয়ন নয়। বৈষম্যের মাধ্যমে সরকার একটি শ্রেণি সৃষ্টি করেছে। অর্থসম্পদ দিয়ে তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে। আর ৯০ শতাংশ মানুষকে যেন নর্দমায় ফেলা হয়েছে। তাদের অধিকার নেই, আয় নেই, তাদের দিন চলে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের আরও বলেন, রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র কখনোই আইনের শাসন দিতে পারে না। এতে একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে থাকে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই গণতন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছিল। গণতন্ত্রে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবে না।
প্রধান বক্তা হিসেবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কয়েক দিনের উপনির্বাচনেও এখন সরকারকে সিল মারতে হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’
জাতীয় পার্টি কাউকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে যাবে না বলে উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হতেও নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। প্রমাণিত হয়েছে, সরকারি দলের কর্মীরা ১ মিনিটে ৪৫টি ভোট দিতে পারে। তাই বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাঁতার কাটা।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় যোগদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম আবদুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, লিয়াকত আলী খান, লাকী বেগম, আনিসুল ইসলাম মন্ডল, মমতাজ উদ্দিন, জহিরুল হক জহির, গোলাম মোস্তফা।