৬ সেপ্টেম্বর দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার চার দিনের সফরে দিল্লি আসছেন। পরদিন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে দুটি নবায়ন হবে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত থেকে সিলেটে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। কুশিয়ারার পানি প্রত্যাহার ছাড়া আরও চারটি এমওইউ সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার, দুই দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতাবিষয়ক এমওইউ সইয়ের জন্য প্রস্তুতির কাজ চলছে।
এর বাইরে সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতা এবং দুই দেশের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম কর্তৃপক্ষের মধ্যে অতীতে সই হওয়া দুটি এমওইউ এবারের শীর্ষ বৈঠকের পর আবার নবায়ন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, সাধারণত অন্যান্য শীর্ষ বৈঠকের মতো এবারও কিছু সমঝোতা স্মারক সই নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ চলছে। তবে তালিকায় সংযোজন আর বিয়োজনের কাজটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে। শুরুর দিকে ১২টি এমওইউ সই ও নবায়নের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কাজেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ নিয়ে কাজ চলতে থাকে।
ওই কূটনীতিক আরও জানান, ভারতের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জিএমআরের সঙ্গে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনায় রূপসা নদীর ওপর নির্মিত সেতু উদ্বোধন করতে পারেন।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, পানিবণ্টন ও সংযুক্তির মতো বিষয়গুলো এবার গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রেখে কীভাবে তা আরও বিস্তৃত করা যায়, তা নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আলোচনা করবেন।
আগামীকাল সোমবার দিনের প্রথম ভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি এসে পৌঁছাবেন। এরপর বিকেলের কোনো এক সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মঙ্গলবার সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখান থেকে তিনি যাবেন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে।
সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একান্তে এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তালিকায় থাকা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে এবং পরে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধানকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেবেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয়দের পরিবারের সদস্যদের হাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বৃত্তি হস্তান্তর করবেন। ৮ সেপ্টেম্বর তিনি রাজস্থানে আজমির শরিফ দরগায় যাবেন। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে ওই দিন বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী।