ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্রদল নেতার মৃত্যু। এ নিয়ে দুজন মারা গেলেন।
ভোলায় পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্রদল নেতা নূরে আলমও গতকাল বুধবার ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে গুলিতে দুজন নিহত হলেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না বলে সরকারের দিক থেকে আশ্বাস দেওয়ার সাত দিনের মাথায় ভোলায় বিক্ষোভ মিছিলের প্রাক্কালে পুলিশের এভাবে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিএনপি কিছুটা হতচকিত। এ ঘটনা সরকারের দিক থেকে কোনো বার্তা কি না, সেই পর্যালোচনা করছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, গত ২৩ জুলাই দলীয় এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যদি তাঁর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়, তাতেও বাধা দেওয়া হবে না। বরং তিনি বিএনপি নেতাদের বসাবেন, চা খাওয়াবেন, তাঁদের কথা শুনবেন। এ বক্তব্যের পর সপ্তাহ পার না হতেই ৩০ জুলাই ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে গুলি করে পুলিশ। গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আবদুর রহিম মাতব্বর নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ২৪ জন। তাঁদের একজন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নূরে আলম গতকাল মারা গেলেন।
এ ঘটনাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সরকারের দিক থেকে ‘বিশেষ বার্তা’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা মনে করছেন, ভোলার ঘটনার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে প্রকারান্তরে এই বার্তা দেওয়া হলো যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে মাঠ দখলের সুযোগ দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকার কতটা কঠোর হতে পারে, তার একটা ইঙ্গিত দেওয়া হলো ভোলার ছোট একটি কর্মসূচিতে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোলা শহরটা কত গজ! মিছিল করে তারা কত দূর যেত? পুলিশ কেন, কার নির্দেশে গুলি করল। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো না কোনো কারণ আছে।’
ভোলার এ ঘটনার আগে গত ২৪ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সভা–সমাবেশ করার অধিকার আছে। এরপর সরকারে উচ্চপর্যায় থেকেও কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার কথা বলা হয়। এরপর সমাবেশে গুলির ঘটনা ঘটল। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের অনেকে মনে করেন, সেদিন ভোলায় এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে পুলিশকে এভাবে নির্বিচার গুলি করতে হবে। এটি ছিল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি। সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোলা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হয়। এই সমাবেশ থেকে শহরে মিছিল বের করা নিয়ে উত্তেজনার একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি ১৫৫টি শটগানের গুলি ও ৩৩টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শক্তি প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন ছাড়া ক্ষমতায় থাকার তো তাদের (সরকারের) আর কোনো সুযোগ নেই।’ অবশ্য ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপির সমাবেশের অনুমতি ছিল, কিন্তু বিক্ষোভ মিছিলের অনুমতি ছিল না। বিএনপি মিছিল বের করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তাদের কাছে অস্ত্র ছিল। তারা অস্ত্র তাক করলে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
পুলিশের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের বক্তব্য আমি গ্রহণ করি না। তারা বলছে, সমাবেশের অনুমতি ছিল, মিছিলের অনুমতি ছিল না। এত অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে কবে রাজনীতি হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মমাফিক মিছিল করলে তো আপত্তি নেই।’ মেনন বলেন, ‘দেশ তো সংঘাতের অবস্থায় নেই, কিন্তু ঘটে গেল। গুলি তো হয়েছে, এটা সত্য। এখন গুলিতে মারা গেছে, নাকি ইটের আঘাতে মারা গেছে, এটা পরের বিষয়।’
অবশ্য ভোলার ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি লাশ সৃষ্টি করতে চায়, এর অংশ হিসেবে ভোলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাঁর দাবি, পুলিশকে অবহিত না করেই আগস্ট মাস শুরুর আগে ভোলায় বিএনপি মিছিল-সমাবেশ করেছে।
ভোলায় হঠাৎ বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা রাজনীতিতে একটা উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও দেড় বছর বাকি। তার আগেই এ ধরনের ঘটনা বিএনপিকে আগেভাগে মাঠে নামানোর কৌশল নাকি সরকার মুখে যা–ই বলুক বাস্তবে কতটা কঠোর হতে পারে তার ইঙ্গিত—এটা নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে বিএনপির ভেতরে-বাইরে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করে সরকার জানান দিয়েছে যে তারা নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করতে চায়।’