গত ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা সংসদ সদস্যদের পেছনে ফেলেছেন। উপজেলায় এ সময়ে তিন গুণের বেশি কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে। গড় আয় ও অস্থাবর সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে।
টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মধ্যাঞ্চল কুমিল্লা, ফেনী ও খুলনা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেশি। বরিশাল, খুলনা ও কুমিল্লা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় অস্থাবর সম্পদ ৫ বছরে বেড়েছে।
আজ রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও নতুন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে। টিআইবি হলফনামা বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে হলফনামা বিশ্লেষণের ফলাফল কেওয়াইসি (আপনার প্রার্থীকে জানুন) ড্যাশবোর্ড উন্মুক্ত করা হয়। হলফনামার বিস্তারিত তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
টিআইবি বলছে, প্রার্থীদের হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের সম্পদের হিসেবেও অসামঞ্জস্য রয়েছে। এ ছাড়া সম্পদ বৃদ্ধিতে দেশের মধ্যাঞ্চলের প্রার্থীরা এগিয়ে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬৪ জন চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, ২ হাজার ৯৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ১ হাজার ৫১৩ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করেছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।
সম্পদ বৃদ্ধির উদাহরণ তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, গত ৫ বছরে একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ। যেখানে ঝালকাঠি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। ২০১৯ সাল থেকে শতভাগ বা তার বেশি সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া ১৯১ জন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
টিআইবির বিশ্লেষণ বলছে, নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ কোটিপতি। আবার সার্বিকভাবে প্রার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই। পাঁচ বছরে কোটি টাকার ওপরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৫১ জন প্রার্থীর এবং ১০ বছরে বেড়েছে ৪১ জনের।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে যে হওয়ার কথা সেটি আসলে বাস্তবে নেই। এখন ক্ষমতাকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিত্ব। ক্ষমতায় থাকতে পারলে সম্পদ বিকাশের অবাধ সুযোগ পান।
করযোগ্য আয় না থাকাটা অবিশ্বাস্য মনে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অপব্যবহার করে বিশাল সম্পদের বিকাশ ঘটেছে। একেবারে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত সম্পদের এ বিকাশ ঘটছে। এসব দেখার জন্য রাজস্ব বোর্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দায়িত্ব আছে।
হলফনামা বিশ্লেষণে টিআইবি আরও উল্লেখ করেছে, প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রার্থীর হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের সম্পদের হিসেবে পার্থক্য দেখা যায়। জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপে ব্যবসায়ীদের দাপট। চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা কম, প্রায় ২ শতাংশ।