আওয়ামী লীগের লোগো
আওয়ামী লীগের লোগো

আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে শরিকদের অনেক প্রশ্ন

শরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে শরিকেরা চায়, আগে তাদের যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, এর সমাধান হোক।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বৈঠক করেও ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের মন গলাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শরিকেরা বলেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা সময় জোটের শরিকেরা অবহেলার শিকার হয়েছে। এর জবাব পেতে হবে। নয়তো জোটের সঙ্গে এখনই ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয় তারা।

গতকাল মঙ্গলবার ইস্কাটনে জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাসায় ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই শরিকেরা তাদের অবস্থান তুলে ধরে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর আগে গত ২৩ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটের বৈঠক হয়েছিল।

সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ শরিকদের নিয়ে বিএনপি এবং বিদেশি শক্তির ‘ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিতে চায়। তবে শরিকেরা চায়, আগে তাদের যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, এর সমাধান হোক।

গতকালের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা অনেকগুলো প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। এর সব কটির জবাব এখনো পাননি। এ পরিস্থিতিতে জোটের কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যাবে? তিনি গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় গুরুত্ব না দেওয়া এবং ভোটে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যথাযথ সহায়তা না দেওয়ার অভিযোগ করেন। ভবিষ্যতে এমনটা হবে না—এমন নিশ্চয়তা চান রাশেদ খান মেনন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের মতো আরও অনেক বড় রাঘববোয়াল আছে। কথা বলতে হলে তো সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। দ্রব্যমূল্য ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে সরকারের বিরুদ্ধে বলতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুও বৈঠকে বিভিন্ন অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, তাঁকে গত সোমবারও গালাগালি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই নেতা থাকলে তিনি জোটের কোনো কর্মসূচিতে থাকবেন না। আর আসন্ন ঈদের পর তিনি কুষ্টিয়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। মিছিল-মিটিং করবেন। এতে যদি মারামারি লাগে, তাতে তিনি পরোয়া করেন না।

১৪ দলের সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাধারণত জোটের বৈঠকে খুব একটা বক্তৃতা করেন না। কিন্তু গতকালের বৈঠকে তিনি সরাসরি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন একাই শক্তিশালী। ১৪–দলীয় জোটের প্রয়োজন আছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। জেপি সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ আদর্শের কথা বলে। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী এলাকায় রাজাকারের সন্তান আওয়ামী লীগের নেতা। এ ছাড়া নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে জোর করে তাঁকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ কয়েকজন গত জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নির্বাচন কেমন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, তা তাঁরা জানেন। কল্যাণ পার্টির মুহাম্মদ ইবরাহিমকে জয়ী করে এনেছে আওয়ামী লীগ। কিংস পার্টিকে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। অথচ ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা করেও তা রক্ষা করা হয়নি। চাইলে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের জিতিয়ে আনতে পারত।

একপর্যায়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, শরিকদের কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। একসঙ্গে বসলে এবং কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তখন জোটের শরিকেরা সব প্রশ্নের জবাব পাওয়ার কথা বলেন। এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। ফিরে এ মাসের মাঝামাঝি ১৪ দলকে নিয়ে আরেকটি বৈঠক করবেন।

বৈঠক শেষে আমির হোসেন আমু বলেন, গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে যেটুকু গোলমাল হয়েছে, তা নিরসন করার জন্য শিগগিরই ১৪ দলের নেতাদের বৈঠক হবে। এ ছাড়া ঈদের পর থেকে ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবে ১৪ দল।