জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন দেশ, মানুষ ও স্বাধীনতার পক্ষে। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে তিনি নির্ভয়ে-নিঃসংকোচে কথা বলতেন। তিনি মজলুমদের আশ্রয় ছিলেন। প্রয়াত হয়েও মানুষের হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে আজ বুধবার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো স্পষ্টবাদী মানুষ আমি আর দেখিনি। যেটাকে তিনি ন্যায্য মনে করতেন, বলতেন। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে যখন যা বলা প্রয়োজন, সব সময় নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে বলছেন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওষুধনীতির কথা উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, উন্নত বিশ্বের ওষুধ কোম্পানিগুলো ‘গরিবের বউয়ের’ মতো বাংলাদেশকে পেয়ে বসেছিল। সেদিকে কারও দৃষ্টি না থাকলেও জাফরুল্লাহ চৌধুরী নজর দিয়েছিলেন। এরশাদের আমলে তিনি (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) একটি ওষুধনীতি করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কাজে লেগেছে। তাঁর করা ওষুধনীতির কারণেই ওষুধ এখনো দেশের মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে আছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমানে দেশের সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন আরও অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনীতিবিদেরা জাফরুল্লাহকে কখনো পছন্দ করেননি। কারণ, রাজনীতিবিদেরা স্পষ্টবাদী মানুষ পছন্দ করেন না, নিবেদিত মানুষ পছন্দ করেন না। কিন্তু জাফরুল্লাহ চৌধুরী কারও রক্তচক্ষুকে কখনো পরোয়া করেননি। সব সময় জনগণের স্বার্থে কথা বলেছেন। জনগণের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
বিএনপির সহ–আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন আমার অভিভাবক। তিনি সকল মজলুমের আশ্রয় ছিলেন। নিজের জন্য, নিজের কথা তিনি কখনো চিন্তা করেননি। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে নিজের আদর্শকে টিকিয়ে রেখে গেছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করাননি।’ তিনি আরও বলেন, আজ রাজনীতি যেভাবে বিভক্ত হয়েছে, সেখানে একজন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। তিনি প্রয়াত হলেও সবার মাঝে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার পাশে না থাকলে, আমাকে সহযোগিতা না করলে আমার মতো প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে উঠে আসা এক ছাত্রের পক্ষে রাজনৈতিক এমন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারতাম না। তিনিই আমাকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে সহযোগিতা করছেন এবং কখন কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। তিনি বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহসী, সৎ ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। জীবনটা সাধারণ মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করতেন। আজিজ উলফাত বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁর শেষ কথা ছিল, “আমার বাংলাদেশকে তোমরা দেখে রেখো।”’
সভার শুরুতে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য নাসিরুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রচারবিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সদস্য জিল্লুর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।