মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের স্বজনেরা প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির বহিষ্কৃত ১৮ নেতা প্রার্থী।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অন্তত ১৪ জনের স্বজনেরা প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল রোববার ছিল এই ধাপের নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই ধাপে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ১৮ জন আত্মীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। একজনের প্রার্থিতা বাছাইয়ে বাতিল হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি ১৪ জন স্বজন।
অন্যদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপিও দলটির নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারছে না। দলের কঠোর অবস্থানের মুখেও তৃতীয় ধাপে বিএনপির বহিষ্কৃত অন্তত ১৮ জন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এই ধাপে বিএনপির বহিষ্কৃত ২৩ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় ভোট হয়েছে ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ২১ মে। আর তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হবে ২৯ মে।
তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে একজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মতো ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনও বর্জন করছে। তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। প্রায় সব উপজেলায় দলটির একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচন ঘিরে যাতে তৃণমূলে দলীয় বিভেদ না বাড়ে, সে জন্য ভোটে দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশ দেয় দলটি।
কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নির্দেশ মানা হয়নি। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ১৬ জন নিকটাত্মীয় প্রার্থী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ধাপে এই সংখ্যা আরও বেড়ে হয় ১৮। তৃতীয় ধাপেও সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ১৮ জন স্বজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন মাত্র তিনজন এবং একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, সংসদ সদস্যদের অনেকে ক্ষমতা নিজের হাতে ধরে রাখতে সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের ভোটের মাঠে নামিয়েছেন।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও নেতাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বিএনপি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান—এই তিন পদ মিলিয়ে দলটির সাবেক ও বর্তমান ৮০ জন নেতা প্রার্থী হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ২৭। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন দলটির ৩৩ জন নেতা।