গণতন্ত্র না থাকায় কথা বলা কত কঠিন, তা টের পাচ্ছেন চা শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের প্রত্যেক আন্দোলনে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী দাবি আনতে হবে। কারণ, অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ন্যায্য দাবি জানিয়েও তা পাওয়া যায় না।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে চা শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে এক সংহতি সমাবেশে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে এসেছে।
চা শ্রমিকদের পূর্ণ বকেয়া মজুরি পরিশোধ, দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা করা, ভূমির আইনি অধিকারসহ সকল মৌলিক নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে চা শ্রমিক ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি। এ সময় চা শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সমাবেশে চা শ্রমিক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের কর্মক্ষেত্রে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার নেই। প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রেখে রেখে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। জরায়ুতে ক্যানসার হয়; ফলে অনেকে মা হতে পারেন না। এ ছাড়া আরও অনেক শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’
চা শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সব শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে চা শ্রমিকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারা সবাই অপুষ্টি ও নানা রোগে আক্রান্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয় দিতে হবে, তা এই ‘রোল মডেল’-এর দেশে কোনো দাবি হতে পারে, এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।
গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন, জীবন জীবিকার আন্দোলন, মজুরির আন্দোলন— এ সবই একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পৃক্ত উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনে যদি গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয় না থাকে, তাহলে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘গণতন্ত্র না থাকলে চা শ্রমিকদের পক্ষেও কথা বলা কত কঠিন, তা গত বছরের আন্দোলনে টের পেয়েছেন; এখনো টের পাচ্ছেন। আপনাদের পেছনে গোয়েন্দা সংস্থা ঘোরে, সন্ত্রাসীরা ঘোরে, চা মালিকেরা যা খুশি তা করতে পারে। এর কারণ হচ্ছে ভয়ংকর অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আমরা বাস করি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বলেন, শ্রমিকদের প্রত্যেক আন্দোলনে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী দাবি আনতে হবে। আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই অর্থবহ হবে না যদি সেই আন্দোলনে শ্রমিকের দাবি, আকাঙ্ক্ষা ও ইস্যু না থাকে।
এই বাজারে দিনে ৫০০ টাকা বা মাসে ১৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করা চা শ্রমিকদের উদারতা বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সারা দেশের মানুষ চা শ্রমিকদের এই দাবির সঙ্গে আছেন বলে মনে করেন তিনি।
এই দাবিতে আন্দোলন জোরদার করতে হবে জানিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাতের বেলা ভোট করে ক্ষমতায় আসলে তাদের কোনো জবাবদিহি থাকে না। অবৈধ সরকারের কাছে ন্যায্য দাবি পেশ করে কোনো দিন সন্তুষ্টি পাবেন না। তাই ভাতের আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে ভোটের আন্দোলনও করতে হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ছয়টি ভ্যালির প্রায় ৭০টি চা-বাগানের প্রতিনিধিরা বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে মিছিল করে বিজয়নগরে অবস্থিত শ্রম ভবন ঘেরাও করেন। ঘেরাও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চা-শ্রমিকের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সবুজ তাঁতী।