পেশাজীবী অধিকার পরিষদ

সরকার ক্রোধের কারণে ড. ইউনূসকে অপমান করছে

শুক্রবার ঢাকায় পেশাজীবী অধিকার পরিষদের ব্যানারে এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন
ছবি: প্রথম আলো

হঠাৎ বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকার রাগ ও ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে অপমান করার জন্যই এসব করছে, এমন অভিযোগ করেছে পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় পেশাজীবী অধিকার পরিষদের ব্যানারে এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, বিরোধী দল ও মত দমনে সরকার এখন বিচার দ্রুত এগিয়ে নিয়ে এমন হয়রানি করছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি সভাকক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিচারিক হয়রানি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস’ শীর্ষক আলোচনা সভাটির আয়োজন করে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ।

সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক এবং অপমানজনক। বিরোধী দল ও মতের মানুষদের ওপর মামলাগুলো হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে অগ্রসর করানো হচ্ছে।’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ড. ইউনূসের ওপর সরকারের আক্রোশ, তিনি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে আনতে সাহায্য করেছেন। এই কাজ করে মানুষের মনে, সমাজে শান্তি এনেছেন। তাই তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। বর্তমান এই সরকার ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো সরকারই ইউনূসের বিরোধী নয়।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘ড. ইউনূস তো বংশীবাদক। তিনি তো হ্যামিলিনের বংশীবাদকের মতো। যেখানেই তিনি যান, লাখ লাখ মানুষ তাঁর পেছনে পেছনে থাকে। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের তরুণসমাজ তাঁকে নিয়ে এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত।’

গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘ড. ইউনূসকে কারা নিন্দা করছে, কারা দুর্নাম করছে আমরা জানি। একজন দেশের প্রধানমন্ত্রী কি একজন নোবেল বিজয়ীকে বলতে পারেন সুদখোর? তিনি কি দেশের টাকা পাচার করেছেন? বরং ড. ইউনূসের কারণেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। অথচ এই দেশে সেই ব্যক্তিকে অপমানিত-লাঞ্ছিত হতে হয়।’

নুরুল হক বলেন, ‘ড. ইউনূসকে নিয়ে খেলা বন্ধ করতে সরকারকে সতর্ক করছি। তাঁকে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। আশা করি তিনি আদালতে সুবিচার পাবেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে খেলা ও হয়রানির চেষ্টা করা হলে তরুণ প্রজন্ম তাঁর পাশে দাঁড়াবে।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ড. ইউনূসকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে। কারণ একটাই, ব্যক্তিগত ক্রোধ। তাঁর বিরুদ্ধে আইন এমনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে যেন তিনি একজন বড় অপরাধী।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে দেখেছি, নেলসন ম্যান্ডেলা কীভাবে ড. ইউনূসকে শ্রদ্ধা করেছেন। তখন একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার খুব গর্ব হয়।’ তিনি বলেন, ‘ধরে নিলাম সরকার শ্রমিকবান্ধব। শ্রমিকের অধিকারের জন্য মূর্ছা খাচ্ছেন। হাসেম ফুডসের যেখানে ৫৪ জন শ্রমিক মারা গেছেন, সেখানে চার্জশিটে মালিক ও মালিকের সন্তান সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই কখন তারা শ্রমিকবান্ধব আর কখন না, সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।’

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিকল্পধারার একটি অংশের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণ অধিকার পরিষদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ হাসান, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান প্রমুখ।