বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও ১৩ মামলা, গ্রেপ্তার ১৭৭ জন

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিগত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির ৯৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ তাঁদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়
ছবি: দীপু মালাকার

নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের ৯ জেলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও ১৩টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ৯৭ জনকে। একই সময়ে ঢাকার বাইরে ১৮ জেলায় দলটির ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দলটির ১৭৭ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং ১৮টি জেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তারের এই হিসাব পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে যে ১৮ জেলায় নতুন করে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো সুনামগঞ্জ, মেহেরপুর, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, বগুড়া ও নোয়াখালী।  

ডিএমপি, আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে সারা দেশে সব মিলিয়ে বিএনপির ৮ হাজার ১৩৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে যে ১৩টি মামলা হয়েছে, তাতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের আরও প্রায় পাঁচ শ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় নাশকতার একটি মামলায় ভাষানটেক থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর গত সোমবার গভীর রাতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

রিমান্ড শুনানিতে শামসুজ্জামান আদালতকে বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ও ভালো নির্বাচনের জন্য তাঁরা সংগ্রাম করছেন। আর প্রধান বিচারপতির বাসভবন আইনের শাসনের প্রতীক। তিনি বলেন, সেদিন (২৮ অক্টোবর) বিএনপির মহাসমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের কেউ বক্তব্য দেননি। মহাসচিবের বক্তব্যের আগেই জনসভা পণ্ড হয়ে যায়। ওই এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

অন্যদিকে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর শামসুজ্জামান উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপির নেতা–কর্মীরাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন। রাস্তায়–ফুটপাতে আগুন দিয়েছেন, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঢাকায় ৯ দিনে ১০২ মামলা, গ্রেপ্তার ১,৫৫৪ জন

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত (৯ দিনে) বিএনপির ১ হাজার ৫৫৪ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সময়ে ঢাকায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১০২টি। গতকাল সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান ডিএমপি গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ৬৯৬ জন, ২৯ অক্টোবর ২৫৬ জন, ৩০ অক্টোবর ১৫৮ জন, ৩১ অক্টোবর ১৪১ জন, ১ নভেম্বর ৯৬ জন, ২ নভেম্বর ৬০ জন, ৩ নভেম্বর ৫৮ জন, ৪ নভেম্বর ৩৭ জন ও ৫ নভেম্বর ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৯ দিনে (২৮ অক্টোবর–৫ নভেম্বর) পর্যন্ত বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগে—৩৩টি। এ ছাড়া মিরপুরে ১৮টি, ওয়ারীতে ১৫টি মামলা হয়েছে। ৪টি থেকে ১১টি করে মামলা হয়েছে রমনা, লালবাগে, তেজগাঁওয়ে, গুলশানে ও উত্তরা বিভাগে।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৬ নভেম্বর (গতকাল) ঢাকায় বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির ৯৭ জন নেতা–কর্মীকে। এ ছাড়া নাশকতার অভিযোগে নতুন মামলা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট থানায়।

ঢাকার বাইরে নতুন ১২ মামলা, গ্রেপ্তার ৮০

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জেলায় বিএনপির ৮০ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলায় ১০ জন করে নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ১৬ জেলায় ১ থেকে ৯ জন করে নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনও রয়েছেন।

এ ছাড়া ঢাকার বাইরে আট জেলায় নতুন করে ১২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে ২টি, ফেনীতে ৩টি, বগুড়ায় ২টি, পিরোজপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে ১টি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির ৪১৫ জন নেতা–কর্মীকে। এর মধ্যে ফেনীর একটি মামলায় জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যাকে আসামি করা হয়েছে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি–অপারেশন) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত এবং পরোয়ানাভুক্ত ১৪০০–১৫০০ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখনো গ্রেপ্তারের সংখ্যা প্রায় সে রকমই রয়েছে। মামলার আসামি ছাড়া বিএনপির কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের একের পর এক গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের ১১ জন নেতা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের কেউ রিমান্ডে, কেউ কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, দিনে–রাতে যেকোনো সময় নেতা-কর্মীদের ধরতে পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। নেতাদের বাসায় না পেয়ে তাঁদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটকের পর তাঁদের থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।