ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এখন পর্যন্ত ১২ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাতও (মোহাম্মদ এ আরাফাত) রয়েছেন।
এত দিন আরাফাত আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। টক শোতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন। গত ডিসেম্বরে প্রথমবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন তিনি। এবার সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তিনি শামিল হলেন।
উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে গত শনিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দলীয় ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। এর মধ্যে আজ সোমবার পর্যন্ত ১২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ছাড়াও চিত্রতারকাও রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এই উপনির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করতে আগামী শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হতে পারে।
আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন হবে। এই ভোট হবে কাগজের ব্যালটে। গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ার পর এই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।
বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে কারণে এ আসনে উপনির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি সংসদে বসার সুযোগ পাবেন মাত্র মাস চারেক। এত কম সময়ের জন্য হলেও এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দলের নেতা ও চিত্রজগতের এক ডজনের বেশি ব্যক্তি দৌড়ঝাঁপ করছেন। উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত—এমনটাই মনে করছেন আগ্রহী ব্যক্তিরা।
আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আগ্রহী নেতাদের মধ্যে যাঁরা দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন, তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত; ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন, মোহাম্মদ আবদুল কাদের খান; যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন; বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জসিম উদ্দিন; ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা সুলতানা; যুবলীগের সাবেক নেতা আবদুল খালেক; সেনানিবাস থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবু সাঈদ; বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নজরুল ইসলাম তমিজি; সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসা; গুলশান থানা আওয়ামী লীগের নেতা আরাফাত আশওয়াদ ইসলাম। এ ছাড়া অভিনেতা মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এই আসনে মনোনয়ন পেতে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতাদের বেশ কয়েকজন চেষ্টা করছেন। তাঁরা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সবুজসংকেত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। পেলে কাল শেষ দিন হয়তো ফরম সংগ্রহ করে জমা দেবেন। এ ছাড়া ক্রিকেটার, চিত্রজগতের অনেকেই এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবারের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র মিলে অনেকেই ভোট করবেন। আর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের ধারাবাহিকতায় এখানে সুষ্ঠু ভোট হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর এই উপনির্বাচনে কোনো বদনাম নিতে চাইবে না আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী একটি সূত্র বলছে, মনোনয়ন পেতে আগ্রহী অনেকই হবেন। তবে আগামীকাল শেষ দিনে কারা ফরম সংগ্রহ করছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শেষ দিন অনেক হিসাব-নিকাশ ও দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংকেত নিয়েই ফরম সংগ্রহ করবেন।
সূত্র আরও বলছে, এই আসনের উপনির্বাচনে তিনটি পক্ষ রয়েছে। প্রথমত, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও তারকা। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় নেতা। তৃতীয়ত, স্থানীয় নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী আরাফাতের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো একটা পক্ষের পরামর্শ ছাড়া ফরম সংগ্রহ করার কথা নয় বলে মনে করেন নেতারা। ফলে তাঁর সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যেহেতু করি, ভোটের আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক। তবে মনোনয়ন পাওয়া না–পাওয়া পুরোপুরি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের সিদ্ধান্তের বিষয়।’
শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও তারকা—এই পক্ষ থেকে এখনো কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। দলীয় নেতারা বলছেন, যেসব শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও তারকার নাম আলোচনায় আছে, তাঁরা কোনো পর্যায় থেকে আশ্বাস ছাড়া ফরম সংগ্রহ করবেন বলে মনে হয় না। ফলে তাঁদের বিষয়টি শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ওয়াকিল উদ্দিন ও কাদের খান দীর্ঘদিন ধরেই এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবারই জোটের কারণে অথবা অন্য রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে তাঁরা বাদ পড়েন। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিনও রয়েছেন। এবার তাঁদের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন দলের কেউ কেউ।
ওয়াকিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই নির্বাচনী এলাকার তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাঁকে এবার সুযোগ দেবেন—এমন প্রত্যাশা করছেন।